অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় সিগারেটের করকাঠামো সংস্কারের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় এবং সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের উদ্যোগে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন হয়ছবি: ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সৌজন্যে

বাংলাদেশে তামাকপণ্য সহজলভ্য হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এর ত্রুটিপূর্ণ ও জটিল করকাঠামো। ফলে তরুণ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সিগারেটের সহজলভ্যতা রোধে কার্যকর করারোপ ও মূল্যবৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। তাই আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের বিদ্যমান চারটি মূল্যস্তর কমিয়ে তিনটিতে আনার এবং মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন দেশের তরুণ চিকিৎসকেরা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় এবং সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন হয়। এতে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত শতাধিক তরুণ চিকিৎসক অংশ নেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকেরা বলেন, সিগারেটের চার স্তরের মূল্যব্যবস্থা—নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম—তামাক করনীতিকে দুর্বল করছে। বিশেষত, নিম্ন ও মধ্যম স্তরের দামের ব্যবধান কম হওয়ায় ভোক্তারা সহজেই এক স্তর থেকে অন্য স্তরে চলে যেতে পারছেন। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যম স্তর একীভূত করে সেগুলোর দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও তরুণ প্রজন্ম ধূমপান থেকে বিরত থাকবে, পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।

তরুণ চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে আসন্ন বাজেটের জন্য প্রস্তাবিত কর ও মূল্যকাঠামো হলো নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা; প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ। একই সঙ্গে সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ অপরিবর্তিত রাখা।

তামাক নিয়ন্ত্রণে বিড়ি ও অন্যান্য তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয়। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি জানানো হয়। জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১০ গ্রামে খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি তোলা হয়।

সন্ধানী ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল অ্যান্ড আপডেট ডেন্টাল কলেজ ইউনিটের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকার আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের অধিক মানুষের অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

মানববন্ধনে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৫ থেকে কমে ১৩ শতাংশে নামবে। এতে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ত্যাগে উৎসাহিত হবে এবং ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত থাকবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. অরুণা সরকার ও সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফর, সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের উপদেষ্টা ডা. আয়েশা সিদ্দিকাসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শতাধিক তরুণ চিকিৎসক।