কানাডা নির্বাচন ও ইমিগ্রেশন

ফেডারেল ইলেকশন একদম নাকের ডগায়—১০ সেপ্টেম্বর। শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার। রাজনৈতিক ইশতেহারও ঘোষণা করেছে সব দল।

বিশ্ব মহামারির এ সংকটময় মুহূর্তে কানাডার হঠাৎ নির্বাচনের পাশাপাশি আচমকা যুক্ত হয়েছে আফগান শরণার্থী সংকট। আফগানিস্তানে তালেবান শাসকদের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডো সরকার ইতিমধ্যে ২০ হাজার আফগান শরণার্থী কানাডায় নিয়ে এসে তাঁদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিনে ৩ হাজার ৭০০ আফগান কানাডা বিমানযোগে আনতে সক্ষম হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আরও আফগান শরণার্থী নিয়ে আসার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

কানাডার এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশটির ইমিগ্রেশন পলিসি ফেডারেল নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কানাডা দিন দিন অভিবাসীদের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই কম, উপরন্তু বয়স্ক লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে, দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে বেশি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী দরকার হয়ে পড়েছে। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে অনেক খরচ করতে হচ্ছে। কারণ, কানাডার স্বাস্থ্য খাতের সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করে। আর সরকারের এ অর্থের জোগান হয় জনগণের দেওয়া ট্যাক্স থেকে।

করোনা মোকাবিলায় ও দেশটির অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে দুই ডোজের টিকার দেওয়ার ব্যাপারে কানাডার সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্ব মহামারির সময় কানাডিয়ানদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য কানাডায় জনবলের যে কী অপ্রতুলতা, তা ভীষণ প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। আর তাই কানাডা প্রতিবছর কমপক্ষে ৪ লাখ ১০ হাজার নতুন ইমিগ্র্যান্ট আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। কানাডার ইতিহাসে এযাবৎকালের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এটি। একমাত্র ১৯১৩ সালে কানাডাতে ৪ লাখ ১ হাজার ইমিগ্র্যান্ট আনা হয়। কানাডিয়ানদের স্বাস্থ্যসেবাসহ ইনফরমেশন টেকনোলজি, ফুড সেক্টর, এগ্রোফুড, ফার্মিংসহ অন্য সব ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯–এর ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে কানাডার অর্থনীতিকে চাঙা করতে, নতুন চাকরি সৃষ্টির জন্য বেশিসংখ্যক ইমিগ্র্যান্ট আনা ছাড়া কোনো উপায়ই নেই।

মহামারি–পরবর্তী কানাডার চলমান ইমিগ্রেশন–প্রক্রিয়াকে আরও বেশি ফলপ্রসূ করার জন্য নতুন ইমিগ্র্যান্টদের চাকরি পাওয়া এবং সেটেলমেন্টের জন্য বিশেষ সহযোগিতা করতে হবে— ইমিগ্র্যাশন অ্যান্ড রিফিউজি কাউন্সিল, সেটেলমেন্ট অর্গানাইজেশন, গবেষক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মিউনিসিপাল, প্রভিন্সিয়াল ও ফেডারেল গভমেন্ট এসব ব্যাপারে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নারী, শিশু ও শরণার্থীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ–সুবিধা তৈরি হওয়া দরকার। বিজনেস ইমিগ্রেশন ঢেলে সাজানো দরকার, ২০১৪ সালের পর কোনো আধুনিক বিজনেস ইমিগ্রেশন–প্রক্রিয়া না থাকায় এবং কুইবেক ইনভেস্টর–প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায়, ফেডারেল স্টার্টআপ ভিসা বা বিজনেস এন্ট্রেপ্রেনিউর ভিসার দীর্ঘসূত্রতার কারণে কানাডা অনেক বিজনেস ইমিগ্র্যান্টদের হারাচ্ছে। এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে পিএনপির মতো ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড অকুপেশন স্পেসিফিক ড্র হতে পারে। স্পাউসল অ্যান্ড ফ্যামিলি স্পনসরশিপ–প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ও টেম্পোরারি ফরেন ওয়ার্কারদের ভিসাপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগান শরণার্থীদের নিয়ে আসার এবং পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

কানাডার ইমিগ্রেশন সিস্টেম প্রতিনিয়ত আধুনিক এবং পরিবর্তিত হচ্ছে। এক্সপ্রেস এন্ট্রি এবং মাল্টিইয়ার ইমিগ্রেশন–প্রক্রিয়া চালু করে কানাডা বেশিসংখ্যক ইমিগ্র্যান্ট আনার সদিচ্ছারই প্রমাণ রেখেছে। বিশ্ব মহামারির এ সংকটকালে কানাডা যেভাবে তাদের ইমিগ্রেশন–প্রক্রিয়া চালু রেখেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

লেখক: মাহমুদা নাসরিন, প্রিন্সিপাল কনসালট্যান্ট, টরন্টো, শিক্ষক ও সমাজকর্মী