কার্ডিফের নির্জন পথে

ওয়েলসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ছবি: লেখক

তখন সবে যুক্তরাজ্যে এসেছি। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়–জীবন মানিয়ে নিয়ে, দেশের টান ছিন্ন করে নতুন জীবনকে স্বাগত জানিয়ে একটু থিতু হয়েছি। আমার ল্যান্ড লর্ড বাসায় এলে দুই প্রবীণ দম্পতির সঙ্গে সুখ–দুঃখের গল্প করি। গল্পে গল্পে একদিন লেডি ল্যান্ড লর্ড বললেন, তুমি ওয়েলসে একটা ট্যুর দিয়ে আসতে পারো। প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটিয়ে এলে দেখবে তোমার মন ভালো হয়ে গেছে। ওয়েলসকে আমরা আমাদের সুইজারল্যান্ড বলি। উনার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভাবছি ওয়েলস ট্যুরে কীভাবে যাওয়া যায়। ভাবতে ভাবতে দেখি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন থেকে মেইল করেছে ছুটির দিনে ওরা ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে এক দিনের ট্যুরের আয়োজন করেছে। ভোরবেলা বাসে উঠে বাংলাদেশি কয়েকজনকে দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। অ্যাডমিন ক্যাডারের সুহানা আপার সঙ্গে দেশে থাকতেই পরিচয়, তাঁর সঙ্গে অ্যাডমিন ক্যাডারের নুসরাত আপা, নুসরাত আপার ছেলে সারজিল, রফিক ভাই, সড়ক ও জনপথ ক্যাডারের সম্রাট ভাই ও গণপূর্তের রকিব ভাইয়ের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হলো। সবাই মোটামুটি ভ্রমণপিপাসু মানুষ। ফলে পরবর্তীকালে একসঙ্গে মিলে অনেক ভালো কিছু ট্যুর করেছি। যেটি স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।

বাস ছাড়ল নির্ধারিত সময়েই। ঘণ্টা দেড়েক পর ইংল্যান্ডের শেষ সীমায় পৌঁছে যাই। ইংল্যান্ডের সীমানা পেরিয়ে ওয়েলসের সীমানায় প্রবেশ করতেই দুটি দেশের প্রকৃতির মধ্যে যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে, সেটি ক্রমেই উন্মোচিত হতে থাকে। ইংল্যান্ডের সীমানা পেরিয়ে ওয়েলসের ভেতরে কিছুটা এগোতেই দেখি প্রকৃতি তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দুহাত বাড়িয়ে যেন পর্যটকদের কাছে ডেকে তার নিজস্ব সুরের মায়াজালে বেঁধে রাখতে চাইছে। রাস্তার দুপাশেই উঁচু–নিচু পাহাড়, পাহাড়ের বুকজুড়ে ভোরের ধোঁয়া ওঠা মায়াবী ইন্দ্রজালের সঙ্গে পাহাড়ের প্রান্তজুড়ে সারিসারি গাছের সারি, পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে চলা ক্ষুদ্র জলধারা, সেই জলধারার কাছে দু–একটি ছোট বাড়ি, অলস ভঙ্গিতে ঘুরে বেড়ানো ভেড়ার পাল, বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে ঝিরঝিরে বর্ষার আলত ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা গাড় রঙের সবুজ ঘাস যেকোনো আগন্তুকের মন ভালো করে দিতে বাধ্য। এদিকে নভেম্বর হলো পাতা ঝরার মাস। শীতের আগমনী বার্তা দিতে সব গাছগুলো পাতা ঝরানোর আগে যেন এক অলিখিত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, কে কার চেয়ে নিজেকে বেশি রাঙাতে পারে। ফলে পাহাড়ের দিকে তাকালে মনে হয় যেন পাবলো পিকাসোর হাতের রংতুলি প্রকৃতি নিজেই তার হাতে তুলে নিয়ে ইচ্ছেমতো রাঙিয়ে নিয়েছে। এ পাহাড়ের পাদদেশে মাঝেমধ্যে ছোটছোট কুঁড়েঘরের দেখা মেলে (শহরের বাড়ির চেয়ে এই বাড়িগুলো ছোট বলেই কুঁড়েঘর বলা), কিন্তু মানুষের খুব একটা দেখা মেলে না।

প্রকৃতির এই অপার মুগ্ধতা সঙ্গে নিয়ে আমরা ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে পৌঁছে গেলাম। আমাদের ওভাবে কোনো ট্যুর প্ল্যান ছিল না। বাস থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। রাস্তার ডান দিকে চমৎকার এক পার্কের দেখা মিলল। পার্ক পেরিয়ে সামনে যেতেই পার্লামেন্টের দেখা মিলল। এ পার্লামেন্টের স্থানীয় নাম Senedd Cymru এবং এর সদস্যসংখ্যা ৬০। পার্লামেন্টের আশপাশে সেভাবে নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। পুরোনো অবয়বের একটি ভবনে বসেই আইন প্রণেতারা বসে আইন প্রণয়ন করে থাকেন। পার্লামেন্ট ভবন পেরিয়ে সামনে যেতেই পেলাম জাদুঘর। জাদুঘরে ওয়েলসের বিভিন্ন ঐতিহাসিক জিনিসের দেখা মিলল। এর মধ্যে বিশেষভাবে চোখে পড়ল সতেরো শতকের দার্জিলিংয়ের কয়েকটি তৈলচিত্র। দার্জিলিংয়ের চা–বাগান, চা–বাগানে কর্মরত নারী শ্রমিক, চা–বাগানের পাশে বসতবাড়ির সামনে অলস ভঙ্গিতে বসা নারী ও শিশুদের ছবি একজন পর্যটককে সেই সময়ের সঙ্গে খুব সহজেই মেলবন্ধন ঘটিয়ে দেয়। জাদুঘরে আরেকটি জায়গায় প্রাচীনকালের মানুষ যেভাবে গুহাতে বসবাস করত, তার চমৎকার একটি অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমরা যে উত্তরাধিকারসূত্রে কালের বিবর্তনের ধারায় কত চমৎকার সব সুবিধা ভোগ করছি, সেটি এই কৃত্রিম গুহার সামনে দাঁড়িয়ে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছিলাম। কার্ডিফের এই জাদুঘরে তৈলচিত্রের সংখ্যাধিক্য, বিশেষ করে চোখে পড়ল। জাদুঘরটি যথেষ্ট বড়। ফলে পুরো জাদুঘর ঠিকমতো দেখতে গেলে ওখানেই আমাদের দিন কেটে যাবে। তাই জাদুঘর থেকে খানিকটা অপ্রাপ্তিকে সঙ্গী করে বাইরে চলে এলাম।

কার্ডিফের জাদুঘরে রাখা সতেরো শতকের দার্জিলিংয়ের তৈলচিত্র
ছবি: লেখক

জাদুঘর থেকে একটু এগিয়ে আসতেই একটি ফাঁকা জায়গায় ছোটখাটো মেলার দেখা মিলল। ডিসেম্বরে ক্রিসমাস আসার আগে থেকেই এদের উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ছুটির দিন থাকাতে ছোট ছেলেমেয়েদের কলকাকলিতে পুরো জায়গা মুখর। কেউ স্কি করছে, কেউ আবার নাগর দোলায় ছড়ছে, কেউ আবার উদরপূর্তিতে ব্যস্ত। এই সময়টাতে আরেকটি বিষয় খুব করে চোখে পড়ল, সেটি হলো লন্ডন আইয়ের রেপ্লিকার সরব উপস্থিতি। এরপরও ডিসেম্বরে যে শহরে গিয়েছি, সেখানেই লন্ডন আইয়ের রেপ্লিকাকে ঘিরে ছেলেমেয়েদের উচ্ছ্বাস লক্ষ করেছি। আমরাও মেলা প্রাঙ্গণে বসে দুপুরের আহার সেরে নতুন করে শহর প্রদক্ষিণে বেরিয়ে পড়ি। দুপুরের আহারের ক্ষেত্রে সুহানা আপা সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন। কারণ, উনি বাসা থেকে খিচুড়ি রেঁধে হটপটে করে নিয়ে এসেছিলেন। এদিকে খাওয়া নিয়ে আমার একটু খুঁতখুঁতে ভাব তখনো রয়ে গেছে। অনেক মেনু উল্টেপাল্টে দেখে অবশেষে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই অর্ডার করলাম। এই যে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের নামে এলে কিছু আলুভাজি পেলাম এবং এটি যে একজন বাঙালির উদরপূর্তিতে খুব একটা আনন্দ দেয় না কিংবা বেশিক্ষণ পেটে থাকে না, সেটি ঘণ্টা খানেক যেতেই উপলব্ধি শুরু হলো।

কার্ডিফ শহরের নির্জন রাজপথ।
ছবি: লেখক

আমরা হাঁটতে হাঁটতে কার্ডিফের সবচেয়ে বড় পার্কে পৌঁছে গেছি। পার্কের কাছে যেতেই সূর্যদেব যেন কী ভেবে প্রসন্ন হলেন। তার আলোর বিভায় সারা দিনের মুখ ভার করে থাকা প্রকৃতিতে হাসির উচ্ছ্বাস ফিরে এল। পার্কের এক পাশে সোজা রাস্তার দুই পাশজুড়ে গাছের সারি। সেই গাছের পাতার সঙ্গে যেন কাঁচা হলুদের মিতালি হয়েছে। দুপুরের উজ্জ্বল সূর্যালোকের উপস্থিতি যেন পুরো পরিবেশটাতে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আসলেই কোনো কিছুর অভাব পরিলক্ষিত হলে সেই জিনিসের কদর খুব বেশি করে অনুভূত হয়। এখানে সেপ্টেম্বর থেকে প্রকৃতি এতটা মুখ ভার করে থাকে যে মাঝেমধ্যে যখন সূর্যের প্রখর সোনালি রোদের দেখা মেলে, তখন প্রকৃতির সাথে সাথে মানুষের মনেও একটা সবুজের আবাহন এসে ধরা দেয়, মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। পার্কে খুব বেশি মানুষের দেখা মেলে না। কোথাও হয়তো দুই একজন ফিটনেস সচেতন মানুষ দৌড়ে চলেছে তার শরীরের অবয়ব ঠিক রাখতে, কোথাও আবার একজন দার্শনিক ধরনের মানুষ পার্কে পেতে রাখা বেঞ্চে বসে ভাবনার জগতে ডুবে আছে। এই যে নির্জনতার বাতাবরণ এটি আসলেই এক অন্য রকম উপভোগের প্রপঞ্চ হিসেবে অনুভবের জানালায় উঁকি দিয়ে যায়।

কার্ডিফের পার্কে প্রকৃতির রং বদল
ছবি: লেখক

কার্ডিফ খুব বেশি বড় শহর না। তবে শহরে ক্যাসলের অস্তিত্ব খুব করে জানান দিতে থাকে। আমরা পার্কের নির্জনতার মাঝে চমৎকার লোকেশনে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা শেষ করে কার্ডিফ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কার্ডিফ ক্যাসেলের দিকে এগিয়ে চললাম। ক্যাসেলটি কার্ডিফ শহরের অন্যতম বড় ক্যাসেল। ক্যাসেলগুলো মূলত কোন প্রোপার্টির মাঝখানে তৈরি হয়েছিল। মধ্যযুগে রাজা কিংবা ভূস্বামীরা তাঁদের নিরাপত্তা এবং সম্পত্তি রক্ষার জন্য এই ক্যাসেল তৈরি করতেন। ক্যাসেলের ভেতরে ঘুরে দেখতে গেলে টিকিট কাটা লাগে। তখন টিকিট কেটে ভেতরে ঘুরে দেখার সময় নেই। তাই বাইরের অংশ দেখেই সন্তুষ্ট হলাম। বাইরের সবুজ মাঠ পেরিয়ে উঁচু পাহাড়ের মতো জায়গায় মূল ক্যাসেলটি অবস্থিত। এই ক্যাসেল একসময় নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হতো, আর এখন সেটি বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সময় সবকিছু বদলে দেয়! এই ক্যাসেলে একসময় একজন সাধারণ মানুষকে ঢুকতে হলে হয়তো দশবার ভাবা লাগত। আর আজ সেখানে মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাসছে, ছবি তুলছে। এক নতুন দম্পতিকে বিয়ের সাজে পুরোনো মডেলের এক গাড়িতে করে ভেতরে ঢুকতে দেখলাম। পেছনে বাদকের দল বাদ্য বাজাতে বাজাতে যেন গার্ড অব অনার দিচ্ছে। ঠিক যেন আমাদের দেশের বিয়ের ব্যান্ড পার্টির মতো। মাঝে মাঝে দুই বিপরীত মেরুর দেশে সংস্কৃতির নৈকট্য অনেকটাই ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করে।

কার্ডিফের মায়ময় পরিবেশে লেখক।
ছবি: লেখক

ক্যাসেল থেকে বেরিয়ে রাজপথ ধরে এগিয়ে একটু সামনে যেতেই কার্ডিফ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া টাফ নদীর দেখা মিলল। দুপাশ বাঁধানো ছোট্ট একটি নদী টাফ। স্বচ্ছ স্ফটিক জলধারা নদীটির বুকে প্রাণ সঞ্চার করেছে। নদী, খাল, বিলের দেশের মানুষ হিসেবে এখানে এসে নদী দেখে খুব একটা মুগ্ধতা জাগেনি। তবে এদের নদীগুলোকে দেখে কিছুটা ঈর্ষা হয়, আফসোস লাগে। এরা এদের নদীগুলোকে কী সযত্নে লালন করে চলেছে, আর আমরা আমাদের প্রকৃতির অপার দানগুলোকে তিলে তিলে শেষ করে চলেছি। এই টাফ নদীর তীর ঘেঁষে দেখলাম নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে সোফিয়া গার্ডেন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। কাকতালীয়ভাবে এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক পয়মন্ত মাঠ। ২০০৫ সালে অজেয় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেই অবিস্মরণীয় জয় ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে এখনো হৃদয়ের তন্ত্রীতে সযত্নে লালিত আছে। সেই সময় অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর দুঃসাধ্য খুব বেশি দলের ছিল না। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটের ওয়ান্ডার বয় আশরাফুলের চোখধাঁধানো শতরান এবং শেষের দিকে আফতাব আহমেদের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ সেই অসাধ্যকে সাধন করে সারা বিশ্বকে বাঘের গর্জন শুনিয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে ২৬৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন রীতিমতো ধুঁকছে, ঠিক তারপর সোফিয়া গার্ডেন প্রত্যক্ষ করল সাকিব-রিয়াদ জুটির সেই মহাকাব্যিক সুরের মূর্ছনা। পঞ্চম উইকেটে ১৯৫ বলে ২০০ রানের জুটির ওপরে ভর করে বাংলাদেশ আবার অসাধ্যকে সাধ্য করে। সোফিয়া গার্ডেনের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হলো না, বাইরের অবয়ব প্রত্যক্ষ করে মনে মনে বড়সড় একটা ধন্যবাদ দিয়ে এগিয়ে চললাম পরবর্তী গন্তব্যে।

কার্ডিফের সমুদ্রসৈকত
ছবি: লেখক

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল সমুদ্রসৈকত। এটি শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের উবার ড্রাইভার ছিল একজন পাকিস্তানি নাগরিক। সে ইতালি থেকে ইংল্যান্ডে এসেছে একটু বাড়তি আয়ের আশায়। ছেলেটি কার্ডিফে এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি, ফলে ও শহরের সব জায়গার সঙ্গে ঠিকমতো পরিচিত হয়ে ওঠেনি। শহরের যেদিক থেকে সমুদ্রসৈকত ভালো দেখা যায় ও আমাদেরকে তার উল্টো দিকে নিয়ে যায়। পরে ভুল বুঝতে পেরে আমাদেরকে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি না করেই ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়। ছেলেটির আচরণে মুগ্ধ হলাম। কার্ডিফের সমুদ্রসৈকত সেভাবে আন্দোলিত করল না। আসলে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের দেশের মানুষকে ছোট্ট একটি সমুদ্রসৈকত সেভাবে বিস্মিত করার কথা নয়। ছোট্ট সৈকতটির বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটির চারপাশ খুবই পরিচ্ছন্ন এবং শহরের দিকের পাড় চমৎকারভাবে বাঁধানো। নভেম্বরের ঠান্ডায় সমুদ্রস্নানের কোনো প্রশ্নই আসে না। সূর্যদেব সেদিনের মতো কার্ডিফ থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন; ক্রমে তার আলোর দীপ্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে। বিদায়ের প্রস্তুতির আগের মুহূর্তে পশ্চিম আকাশে ছড়িয়ে দেওয়া লাল আভার সঙ্গে সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের সঙ্গে গড়ে ওঠা ক্ষণিকের মিতালি নির্জন পরিবেশকে আরও মোহনীয় করে তুলল। প্রকৃতির এই নির্জনতার পরশে সিক্ত হয়ে আমরাও ফিরে চললাম বার্মিংহামের পথে।


*লেখক: সুব্রত মল্লিক, সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার।