‘মহারাজা তোমারে সেলাম’
দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের দূর্দশার সমাপ্তি ঘটলো। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দক্ষিণ বঙ্গের ২১ টি জেলায় স্বর্ণযুগের সূচনা করবে। বেকারত্ব কমে যাবে একটা জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পদ্মা সেতু বৈদেশিক বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলে দিবে। বেনাপোল এবং ভোমরা স্থলবন্দর থেকে দেশের এক-তৃতীয়াংশ আমদানি-রপ্তানি হয়। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে আগের তুলনায় আমদানি রপ্তানি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বাগেরহাটের মোংলা বন্দর অর্থনৈতিক কেন্দ্র হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাবসা বানিজ্য বৃদ্ধি পাবে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। সার্বিক ভাবে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে। ফলে দেশের দারিদ্র বিমোচনের হার বাড়বে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ।এই তথ্য ২০২০ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৯ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) পদ্মা সেতু নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। এই গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩০ শতাংশ মানুষ বলেন তাদের আয় পদ্মা সেতু হওয়ার পর ১৬ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে। এবং ৯৫ শতাংশই মনে করেন পদ্মা সেতুর কারনে কৃষি পন্য পরিবহন সহজ হবে এবং কৃষক সঠিক মূল্য পাবেন। (তথ্য সূত্র - প্রথম আলো)
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে গুরুত্ব হীন জমি এখন মহা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। পর্যটন শিল্পে দারুণ পরিবর্তন আসবে। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদসহ পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যাবস্থা আগের তুলনায় সহজ হয়ে গেছে। এখন আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লাভ হবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে সেই শুরু থেকে। উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে থেকে এ আলোচনা আরও বেশী হয়েছে। যে যাই বলুক না কেনো, সরকারি এবং বিরোধী দলীয় সকল আলোচনা সমালোচনার উর্ধ্বে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের আবেগ। এটা যে শুধু দেশের উন্নয়ন বা অবকাঠামোগত নির্মাণ নয়, এর সাথে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের মুখের হাসি চোখের জল জড়িয়ে আছে।
সেতু নিয়ে যারা যতো কথাই বলুক না কেনো খারাপ আবহাওয়ার জন্য ফেরী বন্ধ থাকায় ঢাকায় সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারার কারণে যে ছেলেটার মা, বাবা কিংবা যে ভদ্রমহিলার স্বামী মারা গেছে তারাই জানে পদ্মা সেতু কি। যে লোকটা মৃত বাবা মায়ের মুখ দেখতে পারে নি সে জানে পদ্মা সেতু কি। চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা যাওয়ার সময় ফেরীতে দেরী হবার জন্য পরীক্ষা না দিতে পারা বেকার ছেলেটা জানে পদ্মা সেতু কি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের অর্থনৈতিক অনেক উন্নয়ন হবে, দেশ এগিয়ে যাবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সেতু নির্মাণের বিষয়টি ছিলো দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের প্রাণের দাবি। পদ্মা সেতু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে বিশ্বের কোনো স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে হয়তো এতো ষড়যন্ত্র হয়নি। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব এবং শক্তিশালী মনোবলের কাছে পরাজিত হয়েছে সকল ষড়যন্ত্র এবং অপকৌশল।
সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ সত্যিই অনেক খুশি এবং আপ্লূত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ সমগ্র দেশের মানুষ। পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে সত্যজিৎ রায়ের সেই কালজয়ী গানের একটা লাইন ই বলব, ‘মহারাজা তোমারে সেলাম।’
*লেখক: সুকান্ত দাস, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া