পাবিপ্রবি দিবস: একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রত্যাশা

উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষায় এ দেশের মানুষকে আলোকিত করার জন্য ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০১ বছর পূর্ণ হয়েছে। এখন দেশে ৫১টি পাবলিক ও ১০৮টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের মানুষকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ৫ জুন ৩০ একর জায়গার ওপর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

পাবনা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাশে রাজাপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। নবীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আজ ৫ জুন ১৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্‌যাপন করছে।
শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি অনুষদের অধীনে সিএসই, ইইই, গণিত ও ব্যবসায় প্রশাসন—এই চারটি বিভাগ ছিল। ১৮০ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে ১৭৭ জন শিক্ষক, ১০৫ জন কর্মকর্তা ও ১৯৪ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন প্রায় ৫ হাজার। প্রতিষ্ঠানটি নবীন হলেও এখানকার একদল তরুণ শিক্ষক তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা, শিক্ষা, গবেষণা, প্রশাসনিক কার্যক্রম, পাঠদান পদ্ধতি আর নিরলস প্রচেষ্টর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১টি বিভাগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভাগগুলো হলো বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ফার্মেসি, রসায়ন ও পরিসংখ্যান বিভাগ। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ব্যবসায় প্রশাসন ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে অর্থনীতি, বাংলা, ইংরেজি, সমাজকর্ম, লোকপ্রশাসন, ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগ। জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আছে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স র‌্যাঙ্কিং ২০২২-এ বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ জন গবেষক। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ জন অধ্যাপক আছেন। দেশে ও দেশের বাইরে থেকে ৪৪ জন শিক্ষক এখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন।

একজন শিক্ষার্থী রোবট উদ্ভাবন করেছেন। অন্য একজন শিক্ষার্থী হুইলচেয়ার আবিষ্কার করেছেন, যা স্মার্টফোন দ্বারা পরিচালিত হয়।

এখানকার একজন শিক্ষার্থী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিকভাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বল্প সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন শেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, দুটি হল, শিক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, দৃষ্টিনন্দন লেক, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ক্যানটিন, কেন্দ্রীয় মসজিদ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক ভিডিও কনফারেন্স রুম, স্বাধীনতা চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন ৪৮০ কোটি টাকার দ্বিতীয় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ১২ তলা দুটি একাডেমিক ভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হল, ১০ তলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ৪ তলা কনভেনশন সেন্টার, ৪ তলা টিএসসি ও গেস্টহাউস ভবন, একটি অ্যাম্পিথিয়েটার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি মন্দির, প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে বিশ্ববিদ্যালয় গেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু স্থাপনার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কাজ সমাপ্ত হওয়ার পথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন। গত ১৩ এপ্রিল তিনি যোগ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবনা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই লেখককে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি নবীন হলেও শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকঠাকমতোই চলছে। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকে প্রতিটি কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী করার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরও আধুনিক ও উন্নত করতে চান তিনি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে চান। প্রতিটি ক্ষেত্রে গুণগত মান বজায় রেখে কাজ করা হবে। আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ বাড়াতে হবে।

উপাচার্য হাফিজা খাতুন বলেন, ‘পর্যাপ্ত স্থান না হলে ভালো কাজ করা যায় না। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে আমাদের অবশ্যই স্থান বাড়াতে হবে। আধুনিক ও গুণগত মানসম্পন্ন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ একর জায়গা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০০ একরে উন্নীত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আমার প্রতিনিয়ত কথাবার্তা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। আমিও এই কাজে যুক্ত আছি।’

উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত। সেটাকে আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আরও দক্ষ জনশক্তিতে গড়ে তোলার জন্য শিগগিরই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু সংকট আছে জানিয়ে উপাচার্য হাফিজা খাতুন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকসংকট আছে। আছে ক্লাসরুমের স্বল্পতা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের সংকট আছে। ল্যাবে সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা আছে। টিএসসি নেই। অবকাঠামো সীমিত। শুধু একটি খেলার মাঠ বাদে উন্মুক্ত জায়গা নেই। মেডিকেল সেন্টারে সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল। আইটির সুযোগ কম। ডিন অফিস নেই। লাইব্রেরিতে বইয়ের স্বল্পতা আছে। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। কিন্তু যখন-তখন বিদ্যুৎ চলে যায়। এই সমস্যাগুলো কাটাতে হবে। আমাদের বড় একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। গুণগত শিক্ষাকে আরও ত্বরান্বিত করা যাবে।

মো. বাবুল হোসেন: জনসংযোগ কর্মকর্তা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা।