পর্যটনশিল্প : এগিয়ে আসতে হবে তরুণ ফটোগ্রাফারদের
রূপ ও বৈচিত্র্যে ঘেরা আমাদের বাংলাদেশ। চারদিকে সবুজ সোনার ফসল পাশে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর; কোথাও আবার উঁচু নিচু পাহাড়-টিলা এ দেশকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। এ দেশের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ মুগ্ধ করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। বারবার টেনে নিয়ে আসে তার রূপের জগতে হারিয়ে যেতে। নৈসর্গিক এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যারা ক্যামেরাবন্দী করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন, তাঁরা হলেন ফটোগ্রাফার কিংবা ফটোসাংবাদিকেরা। বর্তমান সময়ে যখন দিন দিন বেকারত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে, তখন ফটোগ্রাফি আমাদের তরুণদের আশাবাদী করে। দেখা যায়, অনেক তরুণ কোথাও ঘুরতে গেলে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেন কিংবা পত্রিকা অফিসে পাঠান। আমি নিজেও প্রথম আলোর নাগরিক সংবাদে প্রায়ই ছবি পাঠাই।
অনেকে ছবি তুলে টাকা আয় করেন। সেদিন বন্ধু ফয়সালকে নিয়ে হাঁটতে বের হই। তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। একপর্যায়ে ও বলে উঠল, বন্ধু, ফটোগ্রাফি করেও তো টাকা ইনকাম করা যায়। আসলেই তা–ই, তরুণেরা চাইলে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে নিজেদের নাম বেকারের খাতা থেকে কেটে ফেলতে পারেন। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থানগুলো ফটোগ্রাফির মাধ্যমে যদি তুলে ধরা যায়, তাহলে বিদেশি পর্যটকেরা আমাদের দেশে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হবে। এ ছাড়া আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরা ছবি তুলে দিয়ে কিংবা ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করে মানুষের হৃদয় জয় করে থাকেন।
পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকেরা তাঁদের আনন্দময় মুহূর্তগুলো, স্মৃতিটুকু ক্যামেরাবন্দী করতে চান। তাঁরা আনন্দের পাশাপাশি চান স্মৃতিগুলোকে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে। তাই তো পর্যটন এলাকায় অনেক ফটোগ্রাফার দেখা যায়। পর্যটকদের ছবি তুলে দিতে তাঁদের যেমনি আনন্দ হয়, তেমনি পর্যটকেরাও পারেন মনমতো ছবি তুলতে। দুঃখের বিষয় হলো, অনেক ফটোগ্রাফারকে দেখা যায় পর্যটকদের ছবি তুলে দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে, যা কখনো কাম্য নয়। পর্যটন এলাকায় ফটোগ্রাফারদের হতে হবে সৎ ও দক্ষ। কাউকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভালো ফটোগ্রাফারের কাজ নয়। তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হতে হবে নিষ্ঠাবান ও মিষ্টভাষী।
ফটোগ্রাফির মাধ্যমে উদ্ভিদ, জীব, প্রকৃতি ইত্যাদির ছবি তুলে তা বিভিন্ন গবেষণার কাজে লাগানো যায়। অনেক প্রকৃতিবিষয়ক লেখক বিভিন্ন পাখি, বৃক্ষ, ফুল ইত্যাদির ছবি তুলে পত্রিকায় দেন। পত্রিকার পাতায় হাত বুলালে তাঁদের লেখা ও ছবি দেখা যায়, যা আমাদের অনেক কিছু শিখতে সাহায্য করে।
তরুণদের ফটোগ্রাফিতে অধিক আগ্রহ আমাদের আশান্বিত করে। কথায় আছে, ছবি মনের কথা বলে। একটি ছবি শুধু মুগ্ধই করে না, ভাবনার জগতে হারিয়ে যেতে সাহায্য করে। সম্প্রতি আমাদের ক্যাম্পাসে ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে গিয়ে নানা রকমের বিচিত্র ছবি দেখতে পাই। ছবিগুলো যেন ফ্রেমবন্দী নয়। মনে হয়ছিল, প্রতিটি যেন প্রাণবন্ত!
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এ দেশের আঁকাবাঁকা নদ-নদী, ফসলের খেত ইত্যাদি ফটোগ্রাফির মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরা এখন সময়ের দাবি। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুণ ফটোগ্রাফারদের এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: মারুফ হোসেন, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া