এপার গড়া আর ওপার ভাঙার অর্থনীতি
স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসে প্রায়ই খবর হয় রণাঙ্গনের কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, বিবৃত হয় সেই পরিবারের কোন সদস্যের কায়িক শ্রমের কঠোর জীবনধারণের কথা। খবর পাঠ শেষে পাঠকের মনকে তাড়া করতে থাকে যে অবধারিত প্রশ্নটি, তা হলো, বাংলাদেশ এই ৫০ বছরে কতটুকু উন্নয়ন করেছে তাহলে? কিন্তু এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যদি দিনমজুর না করে শুয়ে-বসে কাটাত আলিশান দালানের সুশীতল কক্ষে, তাহলেও কি পাঠক একই প্রশ্ন দ্বারা তাড়িত হতো?
অর্থনীতির অণুবীক্ষণে একজন পরিণত বয়স্ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের দিনমজুরের জীবন উন্নয়নের প্রচলিত সংজ্ঞার সঙ্গে তেমন বিরোধ তৈরি করে না কিন্তু। সত্যি বলতে কি, যে যার জ্ঞান ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করে এবং আধুনিক অর্থনীতির দাবিও তাই। কিন্তু কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যদি তাঁর পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পান, অথবা এমন মজুরি না পান, যা থেকে সে তাঁর বাচ্চার ভালো খাওয়া, পরা নিশ্চিত করতে পারেন অথবা যদি তাঁর সন্তান ভালো শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসুরক্ষার অভাবে তাঁর মেধাকে বিকশিত করতে না পারেন সৃষ্টিশীল কোনো খাতে, উন্নয়নের গল্প সে ক্ষেত্রে অবশ্যই রূপকথায় পর্যবসিত হয়।
বাংলাদেশের জিডিপি এখন ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার, যা শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে ক্লোজ ফিনিশ রেসে রয়েছে। গত ১৩ বছরে আমাদের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ১৯৯১ সালের পর জাতীয় দারিদ্র্য ধারাবাহিক হ্রাস পেয়ে ২০১০ সালে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
এ বাংলাদেশই আবার জিনি সহগ ০ দশমিক ৫৫, যা পাকিস্তানের থেকে ১০ গুণ বেশি। জিনিসহগসহ বৈষম্যের পরিমাপ করে, সেই বৈষম্য যার জবাব দিতে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। আশির দশক থেকে দারিদ্র্য হ্রাস পাওয়ার ধারা অব্যাহত আছে সত্যি, কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৬ সময়ে হ্রাসের হার সংকুচিত হয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে গেছে ২০০৫ থেকে ২০১০ সময়ের ১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে। প্রবৃদ্ধির ঘোড়া তীব্র বেগে ছুটে চলার পরও এই সংকোচন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আয় বণ্টনে অসমতার অসুখ বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে। বৈষম্যের আরেক সূচক পালমা রেশিও ১৯৬৩-৬৪ সালের ১ দশমিক ৬৮ থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৩ সালে ২ দশমিক ৯৩-এ পৌঁছেছে। পাঁচ বছরের শিশুদের অপুষ্টির শতকরা হার সবচেয়ে দরিদ্র অর্থাৎ নিচের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীতে ৪৫, যেখানে সবচেয়ে ধনী অর্থাৎ ওপরের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীতে এই হার ১৭ দশমিক ৪।
তাহলে সমস্যা কোথায়? উত্তর পেতে দেশজুড়ে চলা মেগা প্রজেক্টগুলোর দিকে তাকানো যেতে পারে। অধ্যাপক রেহমান সোবহানের মতে, এগুলো যে চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়, তা থেকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের আলামত স্পষ্ট। তাঁর মতে, গত ৫০ বছরে সম্পদ বণ্টনে বড় ধরনের অন্যায্যতা হয়েছে, বাজার অর্থনীতি জনগণের নাগালে নেই, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান মানুষের খাস জমি দখল করে নিচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যে পুঁজি জোগান দেওয়া হয়েছে, তা সামাজিক ও নিরাপত্তা খাতের চেয়ে বেশি। খবর বেরিয়েছে, দেশের ব্যক্তি খাতের ১৫ শতাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত গুলশানে।
বিশ্বজুড়ে সম্পদের একটি সাধারণ প্রবণতা হলো, গরিবদের কাছে থেকে সেই ধনীদের কাছে চলে যাওয়া, যারা ভোগ করে কম, যার স্বাভাবিক পরিণতি—প্রণোদনার অভাবে চাহিদায় বন্ধ্যাত্ব তৈরি হওয়া এবং ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থনীতির তলা ফুটো হয়ে যাওয়া। প্রখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ রঘুনাথ রাজন মনে করেন, করোনা মহামারি এ চিত্র কিছুটা হলেও পাল্টে দিয়েছে, চাহিদা এ মুহূর্তে এতটা পরিপুষ্ট যে আয় ও সম্পদের সমতা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে? ব্র্যাকের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনা মহামারির আগে যেখানে ১ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হতো, সেখানে করোনাকালে ৪ শতাংশ হারে নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। স্পষ্টতই অর্থনৈতিক চাহিদার বলবর্ধক ওষুধগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শরীর অবধি পৌঁছাতে পারেনি আমাদের দেশে।
একবার ব্রিটিশ ভারতের কয়েকটি প্রদেশে স্যানিটারি কমিশন গঠিত হয়েছিল; কিন্তু তা ছিল মূলত সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্যরক্ষার দিকটা খেয়াল করতে। সেই সময়, অর্থাৎ ১৮৮২ সালে সৈন্যবাহিনীতে মৃত্যু হার হ্রাস পেয়ে হাজারে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছিল; অথচ ১৮৮১-৯১ সময়টাতে আপামর জনসাধারণের মধ্যে গড় মৃত্যুর হার ছিল হাজারে ৪০। ব্রিটিশ শাসনামলে রেলপথের দৈর্ঘ্য বেড়ে ১ হাজার ৮৩২ মাইল হলে বঙ্গদর্শনে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল: ‘আজি কালি বড় গোল শুনা যায় যে আমাদের দেশের বড় শ্রীবৃদ্ধি হইতেছে। এতকাল আমাদিগের দেশ উৎসন্নে যাইতেছিল, এক্ষুণে ইংরেজের শাসন কৌশলে আমরা সভ্য হইতেসি। আমাদের দেশের বড় মংগল হইতেসে। কি মংগল দেখিতে পাইতেস না? ওই দেখ লৌহবর্ত্মে লৌহতুরংগ, কোটি উচ্চৈঃশ্রবাকে বলে অতিক্রম করিয়া, এক মাসের পথ এক দিনে যাইতেসে। ওই দেখ অগ্ণিময়ী তরণী ক্রীড়াশীল হংসের ন্যায় …. বাণিজ্য দ্রব্য বাহিয়া ছুটিতেসে। ….গ্যাসের প্রভাবে কোটি চন্দ্র জ্বলিতেসে….’
কিছুদিন আগে উপজেলা পর্যায়ের একটি স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল কর্মসূত্রে। মূল কম্পাউন্ডে পৌঁছানোর আগে একটি বিশাল পুকুর চোখে প্রশান্তি ও আনন্দের পরশ বুলিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। তো সেই আনন্দ ফিকে হতে শুরু করল যখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর উন্নয়ন পরিকল্পনা সবিস্তারে বর্ণনা করতে শুরু করলেন।
জানা গেল, খুব শিগগির পুকরটি ভরাট করার কাজ শুরু হচ্ছে। অচিরেই একটি নতুন ভবন নির্মিত হবে এবং নতুন কিছু শাখা খোলা হবে। আমি খুব ব্যথিত হলেও অবাক হলাম না, কারণ, আমাদের প্রধান শিক্ষাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই তো একটি মানুষ গড়ার ফ্যাক্টরিতে পরিণত হচ্ছে, একটি করে নতুন ডিসিপ্লিনের জন্ম নিচ্ছে বিশ্বের শিক্ষাকাশে আর নতুন ভবন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তাকে জায়গা করে দিতে। দেহের উপরিভাগের এই উন্নয়ন মডেল এখন দেশজুড়ে; যেখানে যতটুকু পারছে, জলাশয়, বন, মাটি—সবকিছু খামচে ধরছে সে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
আমাদের উন্নয়নগুলো যেন কেমন কেমন, এ যেন সেই গানের ‘এপার ভাঙে ওপার গড়ে, এই তো নদীর খেলা’র মতো। যেমন খবরে প্রকাশ, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ। ওদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২১ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে টেক্সটাইল খাতকে, যা আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রাণবায়ু। এক ঐতিহাসিক আক্ষেপ করেছিলেন, সভ্য মানুষ পৃথিবীর ওপর দিয়ে জোর কদমে হেঁটে গেছে আর রেখে গেছে বিপুল ধ্বংস তার পদচিহ্নজুড়ে। এ কারণেই নাকি প্রগতিশীল সভ্যতাগুলো এক স্থান থেকে আর এক স্থানে সরে গেছে সব সময়।
আমাদের দেশও সেদিকে এগুচ্ছে? বেপজা মিরসরাইয়ে ১ হাজার ১৫০ একর জমি লিজ নিয়েছে বেজার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর গড়ে তুলতে। তিন বছর আগে শুরু হওয়া এ কাজে ভূমি উন্নয়ন করতে গিয়ে বেজা ইছাখালী ইউনিয়নের ডাবরখালী খালটির দুই কিলোমিটারজুড়ে ভরাট করে ফেলেছে, ফলে খালটি ধীরে ধীরে মৃত্যুপানে ধাবিত হচ্ছে। অথচ ৩০০০ একর জমির চাষাবাদ নির্ভর করে এ খালের ওপর। সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর অবশ্য খালটি পুনর্স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন। এই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রচলিত আরেকটি উন্নয়ন মডেল। প্রাকৃতিক আঁধার ভরাট করে কাঠামো বানাতে টাকা খরচ করা হবে, পরে আবার তা ফিরিয়ে দিতে আবার খরচ করা হবে।
‘মাতাল তরণী’ কাব্যগ্রন্থে কবি আর্তুর র্যাঁবোর একটি লাইন আছে—
‘এখন গ্রহটা গেছে প্যাচপ্যাচে বিশৃংখলায় ভরে
চমকে উঠে ছুটে চল গ্রাম থেকে হয়ত শহরে
আবার শহর থেকে ফিরে আয় গ্রামে
গোলকধাঁধায় কারা প্রাণপণ আরামেই আছে …!’
একটি পরিসংখ্যানে পাওয়া যায়, ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসমষ্টির প্রায় অর্ধেক শহরে বাস করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ৮৭ হাজার গ্রাম পাবে শহরের সুবিধা ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের অধীন। কিন্তু এক ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন ঢাকায় জনসংখ্যার যে নিয়ন্ত্রণ ছাড়া দাবানল ঘটাচ্ছে, তা অর্থনীতির যেকোনো মানসীমাকে ছাড়িয়ে গেছে, অন্য সব শহরের বৃদ্ধিকে বিঘ্নিত করছে, সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছে। এর অর্থনৈতিক মূল্য হিসেবে প্রায় ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আমরা হারাচ্ছি।
‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০’-এ গ্রামীণ রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে কৃষি ও কৃষি বহির্ভূত খাতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে।
আবার একই প্রতিবেদনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে, যারা কিনা প্রায়শই কৃষিজমিতে থাবা বসাচ্ছে। কৃষিমুখিতা সূচকে বাংলাদেশের মান ০ দশমিক ৫ থেকে ০ দশমিক ৪-এ নেমে এসেছে। এ নিম্নগামিতা থেকে স্পষ্ট যে দেশের মোট জিডিপিতে কৃষির অবদানের তুলনায় সরকারি বিনিয়োগ প্রাপ্তি কম হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ জিডিপি মানে উচ্চ আয়ের দেশ হবে ঠিকই, কিন্তু সে অর্জন আসবে এর প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ করার বিনিময়ে।
স্মল ইজ বিউটিফুল বইতে শুমেখার দেখিয়েছেন, নির্বিচার নগরায়ণ, জমি ও প্রাণী ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সঞ্চিতিকরণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ—এসব দারিদ্র্যের কারণে ঘটছে না বরং মেটা-ইকোনোমিক (অর্থাৎ নীতির প্রতি একনিষ্ঠ থেকে সম্মিলিত স্বার্থের সর্বাধিক সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ) মূল্যবোধের প্রতি আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস না থাকাটাই এর জন্য দায়ী। প্রকৃতি শূন্যতা ঘৃণা করে; তাই যখন মননগত জায়গাটা কোনো উচ্চতর মূল্যবোধ দ্বারা পূর্ণ না থাকে, তখন তার স্থান নেয় অর্থনৈতিক ক্যালকুলাস যা ক্ষুদ্র, নিচ ও বৈষয়িক স্বার্থের পাখায় ভর করে চলে।
থমাস পিকেটি দেখিয়েছেন ফরাসি বিপ্লব ও দুটি বিশ্বযুদ্ধ ধনীদের সম্পদ কমিয়েছে; যেহেত মূলধনের ওপর মুনাফার হার সব সময়ই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের থেকে বেশি থাকে, একমাত্র যুদ্ধ বা বড় কোনো ঘটনাই পারে সুবিধাভোগী সমাজের সম্পদের মূল্য কমাতে। কিন্তু ২০২৪ সালের মধ্যে সবার আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিতকরণে যে ‘জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল–বাংলাদেশ’ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, তাকে বাস্তবায়ন করতে পারলে আর যুদ্ধের প্রয়োজন হবে না। আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পরিবেশের ক্ষতি না করেই দীর্ঘমেয়াদে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, পানি, মাটি, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না—এ নীতি থেকে সবার জন্য গ্রামে বিনা মূল্যে বাড়ি করে দেওয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে আমাদের সরকার। কিন্তু বাড়ি হলেই যে মানুষ দূষিত শহর ছেড়ে চলে যাবে, তা নয়। তাদের পেট চালানোর ব্যবস্থাও করতে হবে। প্রগতিশীল ব্যক্তিগত আয়কর পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনচক্রভিত্তিক রোজগার নিশ্চিত করা যায়। নির্বিচার কর অব্যাহতি ও বেপরোয়া ব্যয়ের বর্জ্য অপ্রতিরোধ্য গতিতে ফাঁকা করছে সরকারের পকেট। কর ও ব্যয়নীতির আমূল সংস্কার সামাজিক বৈষম্যের অসুখ সারাতে সব থেকে কার্যকর ওষুধ হতে পারে।
১৯৫৫ সালে টম ডেল ও ভার্নন গিল কার্টার নামের দুজন পরিবেশবিদ ‘টপসয়েল অ্যান্ড সিভিলাইজেশান’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন, তাতে তাঁরা লেখেন, ‘হোক সভ্য বা বর্বর, মানুষ আসলে প্রকৃতির শিশু, কখনোই প্রকৃতির প্রভু সে নয়। প্রকৃতির এই সূত্র মাথায় রেখে ‘কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না’—জাতীয় এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারলে সত্যিকারের উন্নত দেশ হয়ে উঠবে আমাদের জন্মভূমি।
লেখক: মোহাম্মদ কাজী মামুন, ব্যাংকার।