ঈদে বড়দেরও আছে পাওয়ার অধিকার
ঝড় এলে তালগাছের মাথার ওপর দিয়েই বেশি যায়..! পুরোনো একটা প্রবাদ। বড়ই কঠিন ও বাস্তব এর রূপ।
আমাদের দেশের বিশেষত ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত সমাজের উঠে আসার গল্পটা কিন্তু সহজ নয়। অনেক পরিবারকে দেখেছি যাঁরা ২৫–৩০ বছর আগে বারোয়ারি বাসায় থেকে জীবন শুরু করেছেন। যেখানে সবাই মিলে থাকার আনন্দও যেমন ছিল, আবার নিত্য ঝামেলারও অন্ত ছিল না।
এক রান্নাঘর ব্যবহার করা নিয়ে বনিবনা না হওয়া কিংবা গোসল করা, কাপড় ধোয়ার জন্য সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা ছিল প্রতিদিনের রুটিন। মন–কষাকষি, হিংসা-দ্বেষ, শত্রুতা এগুলোর ঘাটতি ছিল না। আবার শবেবরাতে পাড়ার সব বাসায় হালুয়া রুটি বিলানোর মতো (খুব একটা সামর্থ্য না থাকলেও) মনমানসিকতাও মানুষের ছিল। ব্যয়ের খাত যেমন অল্প ছিল, তেমনি আয়ই ছিল সামান্যই। অধিকাংশই অভাবের মধ্যেই বড় হয়েছেন। অভাবকে কাছ থেকে দেখেছেন। প্রায়ই এর জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছেন। আজ এ পরিবারগুলোর অনেকেরই থাকার জন্য স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে। পরিবারের কেউ বিদেশে পড়ালেখা করছেন। ভালো চাকরি করছেন কিংবা উদ্যোক্তা হয়েছেন। সব মিলিয়ে ভালোই আছেন।
দুই তিন দশক আগের সেই কঠিন সময়গুলোতে মা–বাবার পাশাপাশি বড় ভাই বা বোনের ওপরও শারীরিক পরিশ্রম কিংবা মানসিক কষ্ট অনেক গিয়েছে। আমরা যারা ছোট, অনেকেই তার কিছু জানি না বা বুঝিনি। অনেক বড় ভাই বা বোন আছেন, যাঁরা সংসার সামলানোতে সাহায্য করা আর ছোটদের দেখতে দেখতে নিজের সংসার গোছানোর সময় পাননি। কিংবা নিজে একাই রয়ে গেছেন। শুধু দিয়েই গেছেন। অন্যদিকে ছোটদের পরিবারের কাছে থেকে পেতে পেতে ওটাই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
এমনটা কিন্তু কাম্য নয়। বড় বলে শুধু দিয়েই যাবেন, এটা কোনো সাংবিধানিক নিয়ম নয়। বরং এটা সমাজে প্রচলিত একটা সুবিধাবাদী প্রথা। এর জন্য অনেক সময় স্বার্থপর একটা জেনারেশন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আমরা যারা ছোট, তারা গিফট কথাটার সঙ্গে সুপরিচিত। এটা যেন বড়দের থেকে আমাদের একপ্রকার পাওনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুবিধাবাদী এ প্রথা ভাঙার সময় এসেছে। সামনে ঈদ। পারলে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী বাবা-মায়ের পাশাপাশি পরিবারে বড় ভাই বা বোনটিকে কিছু উপহার দিন। যথেষ্ট শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে উৎসব-অনুষ্ঠানে কিংবা শুধু ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে ছোটদের কাছে তাঁরা কিছু পেতেই পারেন।
একবার দিয়ে দেখুন। যে পরিমাণ খুশি তাঁরা হবেন, টাকা দিয়ে তাঁর পরিমাপ কখনো করতে পারবেন না। বাড়বে ভালোবাসা, সুখ আর সঙ্গে সমৃদ্ধি।
লেখক: রবিউন নাহার তমা, শিক্ষক ও লেখক