আমাদের মতো চাকরিজীবীদের দেখার কেউ নেই

প্রতীকী ছবি

অনেক স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা শেষ করেছিলাম। সবারই প্রায় এ রকম স্বপ্ন থাকে। এটাতে দোষেরও কিছু নেই। ইংরেজিতে একটা টার্ম আছে ‘বেটার লাইফ’। পড়ালেখা করলে জ্ঞানবুদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সচ্ছলতাটা একটা বড় চাওয়া। চাকরি পাওয়ার ইচ্ছাটাও তাই প্রথম দিকেই থাকে। এদিকে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৮২৪ ডলার হয়েছে। কিছু দিন আগে একমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। আয় বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ। বড় স্বপ্ন দেখাটাই স্বাভাবিক।’
চাকরি পাওয়াটা এখন কতটা কঠিন, তা শেষ কয়েক বছরের অনার্স-মাস্টার্স শেষ করাদের ওপর চোখ রাখলেও বোঝা যায়। যেন অশিক্ষিত নয় শিক্ষিতেরা জাতির অভিশাপ। অনেকে বন্ধুবান্ধব আছে, যার পড়ালেখা শেষ করে এক বছরের বেশি সময় ধরে বেকার বসে আছে। সরকারি ও বেসরকারিতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন কাড়ছে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করাদের এমন করুন অবস্থা দেখে বিবেকবান মানুষের কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

আমি তাদের থেকে ভাগ্যবান। বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষের ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি পাই। তবে সে ঘোর কাটতে বেশি সময় লাগেনি। যে বেতন পাই, তা দিয়ে জীবন চালানো কষ্টসাধ্য। বন্ধুবান্ধবের অবস্থাও তাই। বিভিন্ন কোম্পানিতে বন্ধুরাও আছে নানা চাপ ও অবহেলায়। আবার কোম্পানির মনমতো বেতন–বোনাস দিচ্ছে, তা আবার মেনেও নিতে হচ্ছে। আমার মতো কিছু অভাগার তো কোনো বোনাস, ইনসেনটিভ পাওয়ার সৌভাগ্য এখনো হয়নি। যদিও এর মধ্যে তিন ঈদ চলে গেছে। তার মধ্যে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি ও খরচ বেড়ে যাওয়া অভিশাপ হয়ে এসেছে।

আমার অনেক বন্ধু স্কুল–কলেজের পাঠ শেষ করতে পারেনি, তাদের অনেকেই আমার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কারও আয়ের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু শিক্ষিতদের থেকে অশিক্ষিতদের আয় বেশি হয় তাহলে শিক্ষিতদের মূল্যটা থাকল কোথায়? কারণ, কম টাকা আয় হওয়ায় তাদের থেকে আমাদের নিম্নমানের বাসা, খাবার, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হচ্ছে। উল্টো লেখাপড়া করা আমরা তাদের কাছে হাসির পাত্র হচ্ছি, যা দিন দিন বাড়ছেই। শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাওয়াদের আয় আমার বেতনের কয়েক গুণ। আজকে একটা খবরে দেখলাম ধানকাটা কামলাদের দৈনিক মজুরি ১ হাজার ২০০ টাকা, যা মাসিক হিসেবে দাঁড়ায় ৩৬০০০ টাকা যেটা আমার বেতনের প্রায় দ্বিগুণ। অনেক অটোরিকশা চালকের কথায় তাঁদের মাসিক আয় ৩০-৪০ হাজার টাকা। তারপরেও আমি ভালো আছি, চাকরি তো পাইছি। বলতে পারি আমি চাকরিজীবী। এটাই যদি না হতো তাহলে তো বলতেই পারতাম না।