আগারগাঁওয়ের রাস্তায় বেপরোয়া বাইকার

কয়েক বছর আগের রাজধানীর আগারগাঁও আর বর্তমান সময়ের আগারগাঁওয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। বর্তমান সরকারের হাত ধরে উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে আগারগাঁওয়ের রাস্তাঘাট ও পরিবেশ। একসময় সন্ধ্যা হলে ভুতুড়ে পরিবেশের ভাঙাচোরা রাস্তার আগারগাঁও এখন সন্ধ্যা হলেই আলোকিত হয়ে ওঠে। নতুন রাস্তাঘাট ও সুউচ্চ সুন্দর বড় বড় ভবন আগারগাঁওকে সাজিয়ে দিয়েছে নতুন রূপে। নির্বাচন কমিশন, আইসিটি টাওয়ার, ডাক ভবন—এ রকম অনেক সুন্দর সরকারি ভবন এলাকাটির সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তা আর অন্ধকার ভুতুড়ে পরিবেশের কারণে যেখানে সন্ধ্যার পর মানুষ চলতে ভয় পেত, সেখানে সন্ধ্যা হলেই এখন মানুষের ঢল নামে। বহু মানুষ পরিবার–পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। সুন্দর সুন্দর স্থাপনা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সড়কবাতির আলোর ঝলকানির সঙ্গে প্রকৃতির শান্ত বাতাস মানুষের মনে সারা দিনের জমে থাকা ক্লান্তি কিছুটা হলেও দূর করে দেয়। এখানে ফুচকা, ঝালমুড়ি, বাদাম, আইসক্রিম ইত্যাদির দোকান বসে। এলাকার ছেলেরা উজ্জ্বল আলোর নিচে ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠে।

গত কয়েক দিন বিশেষ কারণে আগারগাঁওয়ের এ এলাকা দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা আমার নিয়মিত চলাচল রয়েছে। এত সৌন্দর্যের মধ্যেও নতুন ভীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু বেপরোয়া বাইকার, যাঁরা সন্ধ্যা হলেই বিকট শব্দ করে বাইক রেসে বের হয়। ভয়ানক স্পিড সঙ্গে বিকট শব্দ এখানে ঘুরতে আসা মানুষের মনে কিছুটা হলেও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। যেখানে সারা ঢাকা সিটিতে বাইকে চলাচলের জন্য বাইকচালক ও আরোহী দুজকেই হেলমেট পরে চলতে হয়, সেখানে এই বেপরোয়া বাইকারদের অনেকেই হেলমেট ছাড়া দিব্বি বেপরোয়াভাবে পুরো এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। হর্ন ‘না’ বাজানোর জন্য সেখানে একাধিক সাইনবোর্ড থাকা শর্তেও এসবের কোনো ভ্রুক্ষেপ তাঁদের করতে দেখলাম না। একটা ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আমার চোখ আটকে গেল! একটা বাইকার পেছনে বসা তাঁর নারী সঙ্গীকে নিয়ে (ওড়না কিংবা ওই জাতীয় কিছু দিয়ে বেঁধে নিয়ে) হেলমেট ছাড়াই তীব্র গতিতে বিকট শব্দ করতে করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিষয়টা আমার কাছে যথেষ্ট অবাক ও ভীতিকর ছিল। কারণ, এ অবস্থায় যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। রিকশাচালকের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কথা হলো। তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি আমাকে জানান, এখানে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগে নাকি নির্বাচন কমিশন ভবনের কাছেই এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় জীবনহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা হোক, এসব অকালমৃত্যু রোধে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে নিম্নোক্ত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে আমার মনে হয়, এসব বেপরোয়া বাইকারদের কিছুটা হলেও লাগাম টেনে ধরা যাবে।

১. যেহেতু এটি একটি অফিস এলাকা, তাই প্রতিটা অফিসের সামনের রাস্তায় গতিরোধক বা স্পিড ব্রেকার বসানো যেতে পারে।
২. সর্বোচ্চ গতিবেগ নির্দেশক সাইনবোর্ড টানানো।
৩. সন্ধ্যার পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো।
৪. বেপরোয়া বাইকারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।
এমনিতেই প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায়। আমরা চাই না বেপরোয়া গতির কাছে হেরে যাক কোনো প্রাণ। সর্বোপরি আমাদের সবার সচেতনতাই এসব অকালমৃত্যু রুখে দিতে পারে।
*লেখক: প্রীতম মন্ডল, ব্যাংক কর্মকর্তা