অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম আমাদের আশার বাতিঘর
দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ‘কুড়িগ্রাম জেলার প্রতি ১০০ জন অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ৭১ জনই গরিব। তারা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারে না। আবার দৈনন্দিন চাহিদা, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বস্ত্র—এসবেও খরচ করার সুযোগ কম। জেলার কোথাও কোথাও দারিদ্র্যের হার ৭৭ ছাড়িয়ে গেছে। তবে কোথাও ৬৪ শতাংশের নিচে দারিদ্র্যের হার নেই।’ ১৯ অক্টোবর ২০১৭।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে তারুণ্যের ইতিবাচক ভূমিকা সমাজকে বদলে দিতে পারে। বিভিন্ন সমস্যা-সংকটের সমাধানে তারুণ্যের অংশগ্রহণ দুরন্ত সব সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা বিকাশের মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছে সামাজিক সংগঠন অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম। কোভিড-১৯ মহামারিতে পিছিয়ে পড়া জেলার মধ্যে অন্যতম কুড়িগ্রামে কাজ শুরু করে অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম। এ জেলায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় মান উন্নয়ন, দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়া, কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী করা থেকে শুরু করে নারীর সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি।
অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রামের করোনার সময় করোনা আপডেট কুড়িগ্রাম নামে ফেসবুক গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে তরুণদের সংযুক্ত করা শুরু করে। সচেতনতার বলয় তৈরির মাধ্যমে নানান কাজ শুরু করে সদস্যরা। ধীরে ধীরে গ্রুপটি হয়ে উঠেছে পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রাম জেলার আশার বাতিঘরে।
অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম ও করোনা আপডেট কুড়িগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা অন্তু চৌধুরী বলেন, ‘অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম ও করোনা আপডেট কুড়িগ্রাম হচ্ছে এ জেলার সবার। আমাদের জেলার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কুড়িগ্রাম জেলার সকল শ্রেণির মানুষ এগিয়ে এসেছেন আমাদের সঙ্গে কাজ করতে।’ গ্রুপের অন্যতম সদস্য শাহ এহসানুল ইমরান বলেন, ‘কুড়িগ্রামের মতো পিছিয়ে পড়া জেলায় টেলিমেডিসিনের মতো একটি সেবা শুরু করা বেশ কঠিন ছিল।
আমরা এই জেলায় প্রথমবারের মতো কার্যকর একটি টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছি, যেখানে মোট ৩৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত আছেন। এখন পর্যন্ত আমরা ৭ হাজার ৫৭৬ জনকে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়েছি।’ লোকবলয়শূন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা টেস্ট করা যখন প্রায় অসম্ভব ছিল, তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান নজরুল ইসলামের ডাকে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্টের শুরু করে গ্রুপটি। এ পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি টেস্ট করানো হয়েছে।
অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম থেকে গরিব-অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ০১৯৭৭৭৭৩৮৩৫ নম্বরে যোগাযোগ করলেই যে কেউ পাচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স সেবা। জেলায় অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম গড়ে তুলেছে একটি পরিপূর্ণ অক্সিজেন ব্যাংক। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বিনা মূল্যে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বাসায় বাসায় গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া শিশুদের ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি। হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে নিয়মিত। এখন পর্যন্ত সাতজন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা ও সেবা প্রদান করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিনা খরচে করোনার টিকা নিবন্ধনের কাজ করে আসছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকেরা।
এরই মধ্যে ১০ হাজারের বেশি মানুষের নিবন্ধন করা হয়েছে। তারুণ্যের অপ্রতিরোধ্য উদ্দীপনায় এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম। সামাজিক সংকটে ভিন্নমাত্রিক উদ্ভাবন ও মানবিকতাকে গুরুত্ব নিয়ে অনগ্রসর জেলা কুড়িগ্রামের সংকটে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। আসছে সময়ের তারুণ্যের ওপর ভিত্তি করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ করার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে অপ্রতিরোধ্য কুড়িগ্রাম।