অদক্ষ তরুণেরাই হয়ে উঠতে পারে দেশবদলের বড় হাতিয়ার

ফাইল ছবি

ব্যক্তিগত কাজে কয়েক দিন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে একটা বিষয়ে উপলব্ধি করলাম। প্রতিদিন হাজারো তরুণ পাসপোর্ট অফিসে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একটি সবুজ পাসপোর্টের আশায়। হাতে একটি পাসপোর্ট এলেই বাড়ির জমি–জায়গা বন্ধক রেখে অথবা বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দেবেন। এর মধ্য অনেকে দালাল ধরেও পাড়ি দেবেন। তাঁদের স্বপ্নের দুয়ার উন্মোচন হবে। এসব তরুণের অধিকাংশই বিদেশে গিয়ে ছোট কাজ করবেন। যেখানে অনেক পরিশ্রম, কিন্তু বেতন তত আশানুরূপ নয়। তারপরও তাঁরা কাজের সন্ধানে সারা বিশ্বে বেরিয়ে পড়তে চান।

তারুণ্যের এই অদম্য ইচ্ছাশক্তির মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির ম্যাজিক। শিক্ষক হিসেবে আমার এ তরুণদের নিয়েই ওঠাবসা। সুযোগ পেলেই তাদের সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশি, তাদের ভেতরের খবর জানতে চাই। আন্তরিকভাবে মেশার ফলে লক্ষ করেছি, তাদের মধ্যে আছে অসম্ভব প্রাণশক্তি। সরকারি পর্যায় থেকে একটু সহায়তা পেলে ওরা যে কি মিরাকল ঘটিয়ে ফেলতে পারে, সেটি আমরা নিজেও জানি না।
এই যে অদক্ষ জনশক্তি আমরা বিদেশে রপ্তানি করি, একটু মনযোগী হলে তাঁরাই হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ দক্ষ শ্রমিক। এ ক্ষেত্রে আমাদের একটু স্মার্ট হতে হবে। গবেষকদের সাহায্য নিতে হবে। প্রথমে গবেষণা করে দেখতে হবে, কোন দেশগুলোতে আমাদের জনশক্তি বেশি পরিমাণে যায়। দেশগুলো বাছাই করার পর দেখতে হবে, সেখানে কোন ধরনের কাজের সুযোগ বেশি। কাজের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার পর শুরু হবে আসল উদ্যোগ।

আমাদের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে আধুনিক কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানে হাতেকলমে শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। যেসব তরুণ বিদেশে কাজ করতে যেতে চান, তাঁরা খুব অল্প পরিমাণ ফি দিয়ে এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হবেন। এরপর দেশ অনুযায়ী তরুণদের সেই দেশের স্থানীয় ভাষা ও স্পোকেন ইংলিশের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে সে দেশের জলহাওয়ার সঙ্গে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন এবং দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাঁদের আয়ের পরিমাণও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের মাত্র ২ শতাংশ দক্ষ
ছবি : প্রথম আলো

আমাদের তরুণদের আরেকটি সমস্যা হলো অর্থসংস্থানের সমস্যা। অনেকেই বাড়ির শেষ সম্বল বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমান। এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে সমস্যার সমাধান হবে। ব্যাংক তরুণদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করবে। এই ঋণের একটি গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। গ্রেস পিরিয়ড পার হওয়ার পর তাঁদের ঋণ গ্রহণকারী ব্যাংকের মাধ্যম দিয়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্ত থাকবে। ব্যাংক ঋণের কিস্তি কাটার পর বাকি টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করবে। এতে বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আসবে, যার কারণে বিদেশে যাওয়া সেই তরুণ, ব্যাংক এবং দেশের রিজার্ভ—তিন ক্ষেত্রই সমানভাবে উপকৃত হবে। এভাবে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে দেশের অদক্ষ তরুণ জনসংখ্যা সম্পদে পরিণত হবে এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টকে আমরা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারব। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই দেশ সত্যি সত্যি বদলে যাবে।

  • লেখক: সুব্রত কুমার মল্লিক, সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া।