এনভোফ্রেম খুলনার সেরা তিন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বেশ কিছু গুরুতর প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। এগুলো মোকাবিলায় প্রয়োজন আশু সমাধান আর জোরালো পদক্ষেপ ‘খুলনা শহরকে “গ্রিন সিটি”তে রূপান্তর করতে এবং শহরের সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষা করতে যদি কঠোর সিদ্ধান্তও নিতে হয়, আমি তা বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়তার সঙ্গে পদক্ষেপ নেব।’
গত শনিবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের ‘সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে’ এনভোলিড লিমিটেডের উদ্যোগে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট-বাংলাদেশ, দ্য আর্থ এবং টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবিলিটির যৌথ আয়োজনে ‘এনভোফ্রেম: টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জলবায়ু সমস্যার সমাধান’ শীর্ষক আইডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।
সিটি মেয়র জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বমঞ্চে প্রথম কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পরিবেশের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকিতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা অঞ্চলের অন্যতম সম্পদ সুন্দরবনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘খুলনার সুন্দরবনকে আমরা মায়ের মতো শ্রদ্ধা করি। এই বন আমাদেরকে অনেক ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচিয়েছে। আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, সুন্দরবনকে রক্ষার উদ্যোগ নিন।’
এনভোফ্রেমের চূড়ান্ত পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি তাঁর বক্তব্যে পরিবেশ রক্ষায় তরুণদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্ব বোঝাতে উল্লেখ করেন, ‘নারীরা যেমনি সমাজে একটি রোল প্লে করেন, তেমনি যুবকেরাও সমাজ-পরিবেশ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করেন। এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতির মুখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশটাকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে হলে নিজেরা সচেতন হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এই লড়াইয়ে তরুণদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে।’
এনভোলিড লিমিটেডের খুলনা এনভোফ্রেম আইডিয়া প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছিল বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার সাতক্ষীরা-খুলনা অঞ্চলের মানুষের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববিষয়ক সমস্যাগুলো তুলে ধরতে। সেই সঙ্গে সেই এলাকার তরুণদের কাছ থেকেই সেসব সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে। এ প্রতিযোগিতায় খুলনা বিভাগের প্রায় ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের অংশগ্রহণকারী দলগুলো এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে তারুণ্যের সমর্থন জোরদার করার জন্য নিজ নিজ এলাকার সমস্যাগুলোর পাশাপাশি অভিনব সমাধান এবং ইতিবাচক প্রভাবভিত্তিক ভিডিও প্রেজেন্টেশন জমা দিয়েছিল।
সভাপতির বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তবতা আর আমরা এর গতি বাড়িয়ে দিয়েছি। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ভৌগোলিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় হবেই। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পাশাপাশি দ্বীপ অঞ্চলেও বনায়ন হচ্ছে, যা আমাদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করছে। এখন আমাদের পরিবেশের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’ উপাচার্য মহোদয় ‘এনভোফ্রেম খুলনা’য় উপস্থাপিত আইডিয়াগুলো বাস্তবে রূপায়িত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, সয়েল ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর মো. সানাউল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের প্রধান আসমা উল হুসনা। যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম, দ্য আর্থ মামুন মিয়া।
জলবায়ু পরিবর্তনের এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমস্যার মধ্যেই রয়েছে সম্ভাব্য সমাধান। এমন চিন্তা থেকেই খুলনা এনভোফ্রেমে এ অঞ্চলের মানুষের সমস্যাগুলো প্রামাণ্য চিত্রে তুলে ধরতে চেয়েছে সেই সঙ্গে তরুণ পরিবেশ উদ্ভাবকদের কাছেই খুঁজেছে সমাধান সূত্র। তরুণ পরিবেশযোদ্ধাদের নিজ এলাকার জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হাজির করেছিল ৩৬টি উদ্ভাবনী সমাধান প্রকল্প।
এনভোফ্রেমের চূড়ান্ত পর্বে বিচারকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক মহসিন উল হাকিম; অশোক অধিকারী, আঞ্চলিক প্রকল্প ব্যবস্থাপক খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়, জেন্ডার-রেসপনসিভ কোস্টাল অ্যাডাপ্টেশন প্রজেক্ট, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং এনভোলিড লিমিটেডের ইনোভেশন অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটি অ্যাডভাইজারি তানিয়া নূর|
অনুষ্ঠানে আও উপস্থিত ছিলেন এনভোলিডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোরশেদুল বারী এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন ম্যানেজার শাহেদ লতিফ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাদিয়া রশ্নি সূচনা।
চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত পাঁচটি দল তাদের সমাধান ধারণা বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করে।
‘ইকো টাইড ভিশনারি’ তাদের লবণাক্ত পানিতে ভাসমান কৃষি ব্যবস্থাপনার একটি অসাধারণ সমাধান আইডিয়ার মাধ্যমে এনভোফ্রেমের প্রথম পুরস্কার জিতে নেয় । এ ছাড়াও ‘ইকো ওয়ারিয়র’ এবং ‘কোস্টাল জিও গার্ডিয়ান’ যথাক্রমে প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানারআপ পুরস্কার জিতে নেয়। সবশেষে প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার টাকা, প্রথম রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় রানারআপ দলকে ২০ হাজার টাকার পুরস্কার চেক প্রদান করা হয়।–বিজ্ঞপ্তি