আমগাছের আত্মকথা

ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় পাঠক, আমাদের শুভেচ্ছা নিন। নিচের ছবিতে দেখুন, আমরা কতিপয় হতভাগা আমগাছ। হ্যাঁ, আমরা আমগাছ বলছি। কিন্তু তাই বলে আমরা আপনাদের অতি আদরের আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা বা এ ধরনের কোনো আম নই। আমরা অতি সাধারণ, নিম্নমানের। আমাদের কোনো নাম নেই। নেই কোনো বংশপরিচয়। আপনারা একান্ত দয়া করে নাম দিয়েছেন ‘আঁটি আম’।

ছবি: সংগৃহীত

এ তো গেল জাতবংশের কথা। আমাদের জন্মের কথাও আমরা মনে করতে পারছি না। এত দিনে সব ভুলে গেছি। শৈশব-কৈশোরে কে বা কারা অতিযত্নে লালনপালন করে আমাদের বড় করে তুলল, সেসব কোনো কিছুই আজ আর মনে নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, তখন যে শিশু-কিশোরেরা আমাদের ছায়াতলে খেলত, ঝড়ের দিনে হইহুল্লোড় করে আম কুড়াত, তাদের কাউকেই এখন আর দেখা যায় না। আর যাবেই বা কী করে? তারা কি আর বেঁচে আছে? হয়তো দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে গেছে। আর দু–একজন বেঁচে থাকলেও তারা এখন অতি প্রবীণ। তাদের হয়তো সেই শক্তি নেই যে আমাদের সঙ্গে দেখা করবে কিংবা একদণ্ড স্মৃতিচারণা করবে।

ছবি: সংগৃহীত

জানেন, সেকালের সেসব শিশু-কিশোর আমাদের খুব ভালোবাসত। আমাদের শাখায় শাখায় থরে থরে আম ধরত। আর তারা পাকা আম খাওয়ার জন্য সকাল–বিকেল ঘুরঘুর করত। কখন বাতাস এসে শাখায় দোলা দেবে, ধুপধাপ আম পড়বে, আর তারা কুড়িয়ে খেয়ে ছোট মুখগুলো রসে ভরে তুলবে। কেউ কেউ মোটা ডালপালায় উঠে মনের সুখে আম খেয়ে পেট ভরে তবেই নামত। না ভাই, আমরা কোনো আপত্তি করতাম না। বরং সুখ পেতাম। খুব ভালো লাগত তাদের। কিন্তু এখন?

ছবি: সংগৃহীত

এখনকার ছেলেমেয়েরা পাকা আমের আশায় দিন গোনে না। বরং লাঠিসোঁটা দিয়ে ঝাঁটাঝাঁটি করে অকালেই কাঁচা আম সব ঝরিয়ে নষ্ট করে ফেলে। আর শিশুদের কথা কী বলব? আপনারা বয়স্করা তো আরও নিষ্ঠুর। আপনারা সুযোগ পেলেই ডাল কাটেন। কেউ কেউ আমাদের একেবারে গা ঘেঁষে ঘর তৈরি করেন, দোকান দেন। নানারকম কূটকৌশলে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেন। ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে দেন না। এভাবে একদিন আমাদের দম ফুরিয়ে যায়। আপনারা তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন, আর শকুনের মতো আমাদের মৃতদেহ নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন। আমরা সংখ্যায় অনেক ছিলাম, তবে এখন আছি মাত্র ১০-১১ জন। প্রতিবছর দু–একজন করে হারিয়ে যাচ্ছি।

ছবি: সংগৃহীত

আপনারা ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়াবাসী নিজেদের শিক্ষার খুব বড়াই করেন। কিন্তু পরিবেশসচেতন হতে পারেননি। বৃক্ষপ্রেমী না হয়ে, হয়েছেন বৃক্ষলোভী (দুঃখিত)।

একবার ভাবুন তো, আপনারা যদি পরিবেশ নিয়ে ভাবতেন বা বৃক্ষপ্রেমী হতেন, তাহলে আপনাদের আদর-সোহাগে আমরাই হতাম একেকটা প্রকাণ্ড শতবর্ষী বৃক্ষ। আমাদের নিয়ে গর্ব করতে পারতেন। আমগাছ দেখার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় না গিয়ে মানুষ এখানেই ছুটে আসত। আর আপনাদের বৃক্ষপ্রেমী পূর্বপুরুষেরা ওপার থেকে মনের সুখে চেয়ে চেয়ে দেখত।

লেখক: আবু কালাম আজাদ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, রুহিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও

ছবি: সংগৃহীত