হেমন্তেই কুয়াশার খামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের আগমন

‘বৃক্ষের পদতলে জীর্ণপত্রের অশেষ উৎসব, বাতাসে কীসের গন্ধ, কাদের সঙ্গীত, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি, এসে গেছে শীত’, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় এভাবেই প্রকৃতিতে আগমন ঘটে কুয়াশার চাদর মুড়ি দেওয়া শীতের বুড়ির। শীতবুড়ির ঠান্ডা হিমেল হাওয়ার পরশে বিবর্ণ হয়ে ওঠে প্রকৃতি। প্রকৃতি যেন হারিয়ে ফেলে তার আপন রং। দিন শেষে সন্ধ্যা নেমে এলেও কোনো কোনো দিন দেখাই মেলে না সুয্যি মামার।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে হেমন্তেই ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে ঘন কুয়াশা। ভোরের আলো ফুটতেই গাছপালার ডালে, সবুজ ঘাসে, ফোটা ফুলে আর শিক্ষার্থীদের হেঁটে যাওয়া রাস্তায় এখন শীতের আগমনী বার্তা স্পষ্ট।

দক্ষিণাঞ্চলের এই সুবৃহৎ ক্যাম্পাস যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব ছবিতে রূপ নিয়েছে। খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে দূর থেকে তাকালে দেখা যাবে—অলস ভোরে হালকা কুয়াশায় ঢেকে গেছে একাডেমিক ভবনগুলো, রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ, আর ছাত্রছাত্রীদের হাঁটার পথ। মনে হবে যেন পুরো প্রকৃতি সাদা চাদরে মোড়ানো।

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই আসে নিজস্ব রূপ ও সৌন্দর্য নিয়ে। হেমন্তের বিদায়ঘণ্টা বাজতেই প্রকৃতিতে নেমে এসেছে শীতের আগমনী বার্তা। নভেম্বরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুভূত হচ্ছে সেই শিরশিরে হিমেল স্পর্শ। ঋতুচক্রে ক্যালেন্ডারের পাতায় এখনো হেমন্তের ছোঁয়া। একপশলা বৃষ্টির পানি ইবিতে এনে দিয়েছে ঘন কুয়াশার শীত। ঝরে পড়ছে হলদে সবুজ পাতা, কাক ডেকে যায় হাঁক ছেড়ে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরে ওঠে চারপাশ। এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলে বুড়ো শালিকের দল। কৃষ্ণচূড়ার ডালে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে হুতোমপ্যাঁচা।

১৭৫ একর আয়তনের এই সবুজ ক্যাম্পাসে এখন ভোরের আলো ফোটার আগেই হালকা কুয়াশা ঢেকে দিচ্ছে ক্যাম্পাসের মাঠ আর সবুজ বৃক্ষরাজি। কুয়াশার হালকা চাদর, হিমেল হাওয়ার স্নিগ্ধতা আর প্রকৃতির শান্ত ছোঁয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় এখন এক অপূর্ব আগমনী রূপে সেজে উঠছে। শুধু সকাল নয়, রাতের বেলাতেও এখন ঘন কুয়াশা নেমে আসে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়ার দাপট বাড়ে, বাতাসে জমে শিশির। ক্যাম্পাসের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কুয়াশার আস্তর পড়লে মনে হয় কোনো রূপকথার দৃশ্যের ভেতর হেঁটে চলেছে কেউ।

অথচ দিনের বেলা চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। সূর্যের তেজ এখনো পুরোপুরি কমে যায়নি। সকাল গড়াতেই রোদ উঠে পড়ে মাঠে, গাছপালায়, ক্লাস ভবনের বারান্দায়। দুপুরের দিকে গরমও খানিকটা অনুভূত হয়। শীতের আগমনী এই সময়ে তাই সকাল-রাতের ঠান্ডা আর দিনের উষ্ণতা—দুটোই একসঙ্গে উপভোগ করছে ইবি শিক্ষার্থীরা।

কুয়াশার চাদর ভেদ করে সুয্যি মামা যখন পৃথিবীতে উঁকি দেয়, তখন যেন ঝলমল করে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। শিশিরভেজা দূর্বাঘাসে নরম রোদের ছোঁয়া লাগতেই নতুন করে জেগে ওঠে শিক্ষার্থীদের প্রাণ। অনেকে ক্লাসের দিকে রওনা হন, আবার অনেকে নিজের শরীরকে আরেকটু ঝালিয়ে নিতে বের হন ব্যায়াম করতে। অনেকে আবার মেতে ওঠেন খেলাধুলায়। যত শীতই হোক না কেন, বেলা বাড়তেই শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা উৎসবমুখর পদচারণে ক্যাম্পাস যেন আবারও প্রাণ ফিরে পায়। গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে যখন ওরা আড্ডায় মেতে ওঠে, তখন মনে হয় যেন শীতের বুড়িকে ওরা উপহাস করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী পুরোনো স্মৃতি ভাগাভাগি করে বলেন, ‘আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে আসছে। ক্যাম্পাসে এটাই আমার শেষ শীত। এই শীত যেমন চলে যাবে, আমিও চলে যাব। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শীতকে আমি খুব বেশি মিস করব। শীতের সকাল, এই প্রকৃতিকে আমি খুব বেশি মিস করব।’

*লেখক: সাব্বির আহমেদ, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]