স্বপ্নের পথে বাধা: শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম ও সফলতা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

স্বপ্ন প্রত্যেক মানুষের জীবনের চালিকা শক্তি। জীবনের জন্য যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন, তেমনি জীবনে বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন স্বপ্নের। জীবনের সফল হওয়ার স্বপ্ন প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনের কোণে বাসা বাঁধে। কেউ বিজ্ঞানী হতে চান, কেউ চিকিৎসক, আবার কেউ শিক্ষকবা উদ্যোক্তা। স্বপ্নপূরণের পথে বাধা আসবেই, কিন্তু যাঁরা হাল ছাড়েন না, তাঁরাই সফল হন।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দেখা যায় যে সেই সব পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। এসব পরিবারের সন্তানদের উচ্চতর পড়াশোনা করে চালিয়ে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় টিউশন ফি, পড়াশোনার সরঞ্জাম বা প্রয়োজনীয় রিসোর্সের অভাব। অনেকেই হয়তো শখের বই কিনতে পারেন না। কিন্তু তারপরও কিছু শিক্ষার্থী এই পরিস্থিতিতে নত হন না, তাঁরা সংগ্রাম করে তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন। সেলফ-স্টাডি, ছোটখাটো কাজ করেন, টিউশনি করিয়ে কিংবা স্কলারশিপের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের স্বপ্নে পৌঁছান।

শিক্ষার্থীরা শুধু আর্থিক নন, সামাজিক ও মানসিক চাপেরও সম্মুখীন হন। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই বিয়ে হয়ে যায়। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা তাঁদের পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যান। আবার অনেক শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফলাফলের চাপ, পারিবারিক প্রত্যাশা, প্রতিযোগিতার পরিবেশ এগুলোর সঙ্গে পেরে উঠেন না। পরীক্ষার ফল খারাপ হলে তাঁরা ভেঙে পড়েন। তাঁরা তাঁদের মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন না, এ মনোভাব পোষণ করে বিষণ্নতায় ভোগেন। কিন্তু তাই বলে কি কোনো শিক্ষার্থী তাঁদের স্বপ্নগুলো পূরণ করছেন না? তাঁদের স্বপ্নগুলো কি ওই সব সমস্যাতেই থমকে যাচ্ছে?

কখনোই না, যে শিক্ষার্থীরা এই বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে সাফল্যের দ্বার। স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল, লক্ষ্যকে স্থির রাখতে হয়।

একটি ছোট্ট গ্রামে এক শিক্ষার্থী তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য যেভাবে প্রতিদিন সংগ্রাম করেছিলেন, তিনি জানতেন না একদিন তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন । তবে তিনি জানতেন যদি তিনি চেষ্টা না করেন, কখনো কিছু অর্জন হবে না । অবস্থা যখনই কঠিন, তখনই শক্তি আসে। একটি গ্রামের মেয়ে যখন তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, তখন তাঁর সামনে অন্য কোনো পছন্দ ছিল না। তিনি নিজের পড়াশোনার প্রতি এতটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল যে তিনি গ্রামের একটি স্কুলের লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে পড়তেন। আজ তিনি একজন সফল প্রকৌশলী। আরেকজন শিক্ষার্থী, যাঁর সমস্যা ছিল মানসিক চাপ। যখন তিনি ক্লাসের অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলেন, তখন তিনি নিজের প্রতি হতাশ অনুভব করতেন । কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন এগিয়ে যেতে হবে শুধু নিজের জন্য, তার ওপর বিশ্বাস রেখে তিনি পরিশ্রম শুরু করেন এবং অবশেষে সেই সংকট জয় করেন।

চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা যদি মনোবল না হারাই এবং প্রতিদিন ছোট ছোট পদক্ষেপ নিই তাহলে বড় লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব কিছু নয়। আজ পর্যন্ত যাঁরা সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছেন, সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। যেকোনো সফল কাজের পেছনেই সংগ্রাম রয়েছে ও থাকবেই, হয়তো কখনো সেটা আমাদের সামনে দৃশ্যমান হয়, আবার কখনো অগোচর থাকে। আমাদের কখনোই ভেঙে পড়া যাবে না, বরং ওই সমস্যাকে সমাধানের পথে নিয়ে নতুন গন্তব্য তৈরি করতে হবে।

*লেখক: জয়া রানী পাল, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

**নাগরিক সংবাদ-এ গল্প, ভ্রমণকাহিনি, ভিডিও, ছবি, লেখা ও নানা আয়োজনের গল্প পাঠান [email protected]