নিজে সঠিক তো দুনিয়া ঠিক!
আমরা অনেকেই স্বপ্ন দেখি প্রিয় বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে দেখতে। দিন শেষে দেশ সবার আগে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশের উদাহরণ আমরা প্রায় দিই। তবে আমরা নিজেরা কি ওই দেশের মতো হতে পারছি!
এইতো সেদিন রাস্তায় কলার খোলসে পিছলে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙেছেন শফিক সাহেব। তাঁর ক্ষোভ দেখলে আশেপাশের সবাই পালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। পাড়া–মহল্লা, এরপর দেশ নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাড়াঝাড়ি করার পর যখন জানতে পারলেন, তারই ছোট ছেলের ফেলে দেওয়া কলার খোলসে তিনি নিজেই আহত হয়েছেন, তখন তিনি এটি ‘একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই উড়িয়ে দিলেন। আশপাশের সচেতন মানুষ কিছুটা সমালোচনা করে যে যাঁর মতো কাজে ফিরে গেলেন। কলার খোলস আর উদ্যোক্তা কিন্তু আগের মতোই তাঁদের মহান কাজ করেই যাচ্ছেন। এরপর হয়তো আমি বা আপনি হাড় ভাঙা রোগী হতে যাচ্ছি কি না! কারণ শফিক সাহেব তো এবার সাবধান!
মাছের বাজারে দরদাম করা শুরু করছি, এটাই তো স্বাভাবিক। দাম ৩৫০ কেজি চাইলে ৩৩০ টাকা তো বলতেই হবে। তারপর একদম না দিলে আর কি করা, ৩৫০ টাকা দিয়েই কিনতে হবে। আজকের বাজার দর ৩৫০ টাকা কেজি রুই। ৩৫০, ৩৫০ টাটকা রুই, একদাম একদাম। মোটামুটি অনেকেই কেনার জন্য সিরিয়ালে আছি। কিন্তু হঠাৎ মাছওয়ালা মাছ বিক্রি করবেন না। কারণ কী? তাঁর মাছ নাকি ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়ে গেছে। মহল্লার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুমন সাহেবের লোক এসে কোনো দাম না করেই সব মাছ নিয়ে গেল। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে মাছ বিক্রেতা আর ব্যবসায়ীর সমালোচনা করে চলে গেলাম। তাতে কি আর মাছের দাম কমবে, নাকি মাছ বিক্রি হবে না! কারও কিছুই হবে না।
আবার সেদিন এলাকার সবচেয়ে মহৎ আর সৎ ভাবা মানুষটা দুর্নীতির দায়ে ধরা খেলেন। চাকরি থাকা অবস্থায় তার কত নাম–ডাক, কতই–না দান–খয়রাত করতেন। অনেক মানুষ ধারদেনা করত তাঁর কাছে, বিনা সুদে শোধ নিতেন। আজ ধরা খাওয়া মাত্রই সবাই তাঁকে ভুলে গেল। কিন্তু সবাই এটা তো জানত, তিনি ব্যাপক ঘুষ নিতেন, আর সেই টাকা তিনি ওড়াতেন। জেনেশুনে সবাই সুযোগ নিয়েছি, কিন্তু আজ তাঁকে ভুলে গেলাম। ওই সময় টাকার হিসাব চাইলে হয়তো লোকটাও ভালো হয়ে যেতেন।
সোসাইটির গর্বিত বাবা–মা যখন মাদক নিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়ান, ঠিক তখনই তাঁদের সন্তানেরা একাকী মাদকের বেড়াজালে জড়িয়ে অপরাধ করে যাচ্ছেন। ট্রাফিক নিয়ে হাজার কথা বলে ট্রাফিক পুলিশদের লক্ষাধিক গালি দিয়ে বেড়াই, ঠিক তখনি নিজের বাইকটা নিয়ে রংসাইড বা ফুটপাথে উঠিয়ে দিয়ে বলি, ‘এই দেশে মানুষ থাকে!’
মেট্রোরেল স্টেশনের লিফটে অসুস্থ বা বয়স্ক রোগীর চেয়ে সুস্থ মানুষ বেশি দেখা যায়। লিফটের সিরিয়াল দেখে অসুস্থ মানুষ ভয়েই সিঁড়ি ব্যবহার করে। এখানেও কি জরিমানা করতে হবে! সব যদি আইন করেই হয়, তাহলে আমরা তো সবাই অপরাধী।
আমরাই কিন্তু সেই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া গিয়ে নিয়ম মানি, ঠিকঠাক লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ করি, সিগন্যাল মানি, কলার খোলস ডাস্টবিনে ফেলি, ন্যায্য দামেই মাছ কিনি, দুর্নীতি করলে সুযোগ না নিয়ে প্রতিবাদ করি, মাদককে না বলি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে আমরা আমজনতা ঠিক না হলে ‘সোনার বাংলাদেশ’ কে বানাবে!
‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]