ফিলিস্তিন আমাদের কী শেখায়
ফিলিস্তিন, একসময়ের শান্তিপূর্ণ ভূমি, আজ রক্তে ভেজা একটি নাম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা নিপীড়ন, দখল এবং গণহত্যার করুণ চিত্র আজ বিশ্ববাসীর সামনে স্পষ্ট। এই নাম এখন শুধু একটি ভৌগোলিক সীমানা নয়, এটি বিশ্বের অন্তরকে আলোড়িত করা এক মানবিক সংকটের প্রতীক। ২০২৩ সাল থেকে গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলা, স্থল অভিযান, বোমা হামলা এবং অবরোধের কারণে মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১৫ হাজারের অধিক আহত। যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই নিষ্ঠুরতার মুখে দাঁড়িয়ে মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা কী? ফিলিস্তিনের অসহায়ত্ব আমাদের মুসলিম জাতিসত্তার জন্য এক গভীর বার্তা বহন করে, একটি আত্মজিজ্ঞাসার বার্তা।
প্রথমত, ফিলিস্তিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের অভাব। শতকোটি মুসলমানের এই বিশাল জনগোষ্ঠী আজ বিভক্ত, প্রতিটি রাষ্ট্র নিজের স্বার্থে আবদ্ধ। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং পাশ্চাত্য শক্তির প্রভাব মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত পদক্ষেপকে দুর্বল করে তুলেছে। ফিলিস্তিনের শিশুর কান্না, মায়ের আহাজারি, তরুণদের রক্তপাত—সবই যেন নির্বিকার চোখে দেখছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো।
‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
দ্বিতীয়ত, এই অসহায়ত্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয় নেতৃত্বের সংকট। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রনায়ক কেবল ক্ষমতা রক্ষা নিয়ে ব্যস্ত, জনগণের অনুভূতির প্রতিফলন নয়। ফিলিস্তিন প্রশ্নে কার্যকর কূটনৈতিক চাপ, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা কিংবা বর্জনের মতো পদক্ষেপ খুব কমই দেখা যায়।
তৃতীয়ত, ফিলিস্তিন আমাদের শিক্ষা দেয় যে শুধু আবেগ নয়, প্রয়োজন সংগঠিত শক্তির। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বা প্রতিবাদ মিছিল করে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, যদি না এর পেছনে থাকে কৌশল, ঐক্য এবং দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি।
ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি সতর্কসংকেত। এটি কেবল রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক বিষয় নয় বরং একট মানবিক, ধর্মীয় ও নৈতিক প্রশ্ন। আমরা যদি এই সংকটে চুপ থাকি, তাহলে আমাদের ঐক্যের দাবি, উম্মাহর চেতনা—সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তবে হতাশার মধ্যেও কিছু আশার আলো রয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। নতুন প্রজন্ম প্রশ্ন তুলছে, সচেতন হচ্ছে, সোচ্চার হচ্ছে। এই জাগরণকে শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে হয়তো মুসলিম বিশ্ব আবার তার সম্মান ও মর্যাদার পথে ফিরতে পারবে। ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর অন্তরের আর্তনাদ, বিবেকের দংশন। আজ যদি আমরা চুপ থাকি, কাল ইতিহাস আমাদেরও ক্ষমা করবে না। ফিলিস্তিনের শিশুদের কান্না, ধ্বংসস্তূপে পরিণত শহর, হাসপাতালের ধ্বংসাবশেষ, এই দৃশ্যগুলো শুধুই সংবাদ নয়, এগুলো আমাদের বিবেকের পরীক্ষা। এখনই সময় মুসলিম বিশ্বকে জেগে ওঠার, রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে দৃঢ় ও কৌশলী ভূমিকা রাখার। না হলে ইতিহাসে ফিলিস্তিনের রক্তের সঙ্গে আমাদের নীরবতাও সমানভাবে লেখা থাকবে।
*লেখক: মো. সাইদুর রহমান, শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।