প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদ ইবিরিইউ-প্রেসক্লাব-ইবিসাসের
দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তব্যরত সাংবাদিক সংগঠন ‘ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি’। একই সঙ্গে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনারও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ক্যাম্পাসে কর্তব্যরত সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) কর্তব্যরত তিন সংগঠনের পৃথক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তাঁরা।
ইবিরিইউ নিন্দা ও প্রতিবাদ
ইবিরিইউ সভাপতি ফারহানা নওশিন তিতলী ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার কবির রিমন যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং জনগণের সাংবিধানিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি চ্যালেঞ্জ। সংবাদপত্রের কার্যালয় কখনোই হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। দেশের একজন প্রবীণ, দায়িত্বশীল ও নীতিবদ্ধ সম্পাদককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার ঘটনা সম্পূর্ণ অশোভন, অমানবিক ও আইনের শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভিন্নমত দমন, সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা রোধ এবং গণমাধ্যমকে নীরব করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের হামলা পুরো সমাজকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটি জাতীয় নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর এক অশনিসংকেত।
ইবি প্রেসক্লাবের নিন্দা
এক যৌথ বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ইবি প্রেসক্লাবের সভাপতি আবির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুসাইন। বিবৃতিতে তারা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও ব্যথিত হয়েছে ইবি প্রেসক্লাব। তবে এই শোকাবহ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। একই সময়ে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার মতো নিন্দনীয় ঘটনার জন্ম দেয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের হামলা এবং একজন সম্পাদককে লাঞ্ছিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি গণতান্ত্রিক চেতনা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, গণমাধ্যমকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা একটি পরিকল্পিত অপচেষ্টা, যার উদ্দেশ্য স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মতপ্রকাশকে দমন করা। এর মাধ্যমে সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীতেও এ ধরনের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কখনোই সফল হয়নি।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
ইবি সাংবাদিক সমিতির প্রতিবাদ
একই প্রসঙ্গে ইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নিয়ামতুল্লাহ মুনিম ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার অফিসে হামলা এবং নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের প্রতি আক্রমণ স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ। যারা কলমের শক্তিকে ভয় পায়, তারাই এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়ে সত্যকে দমিয়ে রাখা যাবে না।’
নেতারা আরও বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলে যদি কেউ সংবাদমাধ্যমে আগুন দেয়, অফিস ভাঙচুর করে কিংবা সম্পাদকদের ওপর হাত তোলে, তবে তারা গণতন্ত্রের ন্যূনতম চেতনারও ধারক নয়। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সাংবাদিক সমাজ কখনোই ভয় পেয়ে নীরব হবে না।’
ইবিসাস, প্রেসক্লাব ও ইবিরিইউ অবিলম্বে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি সাংবাদিক, সম্পাদক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে।
*লেখক: রবিউল আলম, শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া