সানগ্লাস

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মহেশ মনের আনন্দে রেলস্টেশন থেকে বের হয়ে রিকশা খুঁজছিল। কেউ একজন কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, বস, ৪০৭ জাম্বিয়া। মহেশ কিছু বুঝতে পারল না। লোকটা একটা পাকেটের দিকে ইঙ্গিত করল। মহেশ কিছুটা পথ হেঁটে রিকশা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ওরা পিছু ছাড়ল না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ একজন ঘাড়ে আঘাত করে বসল। এরপর মহেশের আর কিছু মনে নেই।

এক চোখ ভাঙা চশমা নিয়ে মহেশের কৌতূহলের শেষ ছিল না। তবে চাটমোহর স্টেশনে একজন জিজ্ঞেস করলেন, চশমা কি ভেঙে গেল? মহেশ হেসে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল। অবশ্য অবাক বিস্মিত হয়ে কেউ তাকিয়ে থাকেনি। যদিও ট্রেনের কামরায় একটা মেয়ের দিকে মহেশ ভাঙা চশমা দিয়েই অপলক তাকিয়ে ছিল।

চোখে পানির ঝাপটা পেয়ে মহেশের জ্ঞান ফিরল।

চারদিকে বিশেষ মাস্ক আর মুখোশ পরা বেশ কয়েকজন গুন্ডামার্কা মানুষ দাঁড়িয়ে। অন্ধকারমতো একটা ঘরে মহেশকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাদের বস জিজ্ঞেস করল, মালগুলো কই?
: মাল! কিসের মাল? এখনো মাল তো হাতে পাইনি। গত পরশু কোম্পানির মাল ডেলিভারি দিয়েই বাড়ি গিয়েছিলাম। আজ তো অফিসে যোগ দেব, তারপর মাল ডেলিভারি দেব বলেই এসেছি, অফিসে যাওয়া হলো না। ওরা ধরে নিয়ে এল তো।
সঙ্গে সঙ্গে মহেশ অট্টহাসি শুনতে পেল, হাসি শেষ হওয়ার আগেই গালে কড়া থাপ্পড় পড়ে গেল!
: হারামখোর, মাল চেনে না! ওর.....দিলেই চিনবে!
আবার অট্টহাসি!
: কি খুব সহজে হজম করে ফেলবি! কয়েক কোটি টাকার মাল এত সহজে ছেড়ে দেব ভেবেছিল?
: দেখুন আপনার ভুল করছেন। আমি এক কোটি টাকা কখনো দেখিনি। আমাকে ছেড়ে দিন।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

: নিশ্চয়ই তোকে ছেড়ে দেব; মাল বুঝে পাওয়ার পর (মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে)।
: আধা ঘণ্টা তোর জন্য পুলিশের ভয়কে উপেক্ষা করে রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কী করছিলি ততক্ষণে? মাল সরিয়ে দিয়ে দেরিতে এসে এখন নাটক করছিস হারামজাদা? বল, মালগুলো কোথায় রেখেছিস?
মহেশ বুঝতে পারছে যে সে নরকের দরজায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু তার অপরাধ বুঝতে পারছে না। আসার সময় তার চশমার একটা গ্লাস পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়, তখনই বোঝা উচিত ছিল আজকের দিন কুফা। এটা একটা বড় ভুল হয়েছে। সে তখন বাড়ি ফিরে গেলে এতকিছু ঘটত না। ওদের নির্যাতনে একসময় মহেশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
: বস, কিছুই স্বীকার করাতে পারলাম না। আরও নির্যাতন করলে মরে যেতে পারে।
: তোরা ভুল লোককে তুলে আনিসনি তো?
: আমাদের সিগন্যাল কখনো ভুল হয়েছে কি?
: কেউ আমাদের বোকা বানায়নি তো!
: আজকের রাতটা দেখা যাক। আমাকে একটু চিন্তা করতে দে।
: একই বর্ণনা! সানগ্লাসের এক চোখ ভাঙা, ‘খ’ বগি থেকে বের হবে, একই ব্যাগ। তা ছাড়া আমরা সময় চলে যাওয়ার পরের আধা ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কোনো ভাঙা সানগ্লাস পরা কেউ আসেনি। সব অপারেশনে নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট আগেই আমাদের ডিল ফাইনাল হয়ে যায়।
: আমিও খোঁজ লাগাচ্ছি।
ফিল্মি কায়দায় অপহরণ; গ্রেপ্তার ১!
অনলাইনে নিউজ দেখেই সুজন বসকে ফোন দিল।
: বস, একজন ধরা পড়েছে। আর পেপারে আমাদের গতকালের ঘটনা!
: সুজন, আরেকটা নিউজ দেখিসনি! তিন কোটি টাকার বেআইনি পণ্যসহ ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার!
: দেখছি বস।
: কে তথ্য পাচার করেছে? আমি আসছি।
: ড্রাইভার ধরা পড়ল কীভাবে? অনেক কষ্টে এই গোপন আস্তানা পেয়েছি। এখানে আর থাকা গেল না।

: ভাগ্য ভালো আমরা এই লোককে কিডন্যাপ করে এনেছি, নতুবা কিছুক্ষণ পরই পুলিশ এসে আমাদের কিডন্যাপ করত!
: ভারতীয়কে পুলিশ আমাদের কাছে নিয়ে আসার আগেই আমরা চম্পট দিয়েছি। আরেকটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছি। তা হলো, কারও মুঠোফোন ব্যবহার করিনি।
: আমাদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পুলিশ আমাদের খুঁজছে!
: ড্রাইভার যদি সব কোর্টে বলে দেয়?
: আমরা কী করতে পারি?

: এই পরিস্থিতিতে আগে কী করা হয়েছে মনে নেই?
সুজন, একটা মিথ্যা ঢাকতে কয়েকটি মিথ্যা বলতে হয়। তখন মিথ্যাটা সত্যি বলে বিশ্বাস করানো সহজ হয়। এখন একটা অপরাধ ঢাকতে আরও অপরাধ করতে হবে। সবাই চলে যাওয়া যাক, এখানে আরও দেরি করলে আরেকটা ভুল হবে।
: বস, মুরগির কী হবে?
: মুরগি বেঁচে থাকলে শব্দ করবে আর মরে গেলে পচা গন্ধ বেরোবে! দুটোই আমাদের জন্য সমস্যা। ভেবে দেখ তোরা কী করতে চাস।

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]