ঈদযাত্রায় উত্তরের পথে এবারও কি ভোগান্তি!

বেশি নয়, আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগের কথা। ঈদযাত্রায় ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় যেতে কতটা সময় লাগত ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, কয়েকটি ঈদে ঢাকা থেকে বাসে উত্তরের জেলা নওগাঁয় যেতে সময় লাগত ২০ থেকে ২২, এমনকি ২৪ ঘণ্টার বেশি। জ্যাম, গরমে সেসব দিনে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত। বিশেষ করে যদি বাসে বয়স্ক, নারী ও শিশু যাত্রী থাকত, তবে দুর্ভোগটা হতো অসহনীয়।

অবশ্য এই কয়েক বছরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে চার লেনের সড়ক হয়েছে উত্তরের জেলা রংপুর পর্যন্ত। যদিও পুরো সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে এখন যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, সেটিও অনেকটাই আশাব্যঞ্জক। তারপরও উত্তরের মানুষের ভয় কাজ করে ঈদ এলেই। অন্য সময়ের তুলনায় ঈদে এসব সড়কে গাড়ির চাপ অন্তত দ্বিগুণ হয়ে যায় ঈদে।

ঢাকা থেকে উত্তরের ১৬ জেলায় বের হওয়ার দুটি প্রধান পথ, একটি উত্তরা হয়ে। অবশ্য ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় মহাখালী বা এই এলাকা দিয়ে বের হওয়া বেশির ভাগ গাড়ি এখন গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে চন্দ্রায় গিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে চলে যায়। অন্যদিকে শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, গাবতলী হয়ে যেসব গাড়ি উত্তরের জেলায় যায়, সেগুলো আমিনবাজার সেতু পার হওয়ার পরই চার লেনে প্রবেশ করে। এই পথ অনেকটাই মসৃণ থাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উঠতে খুব বেগ পেতে হয় না।

তারপরও পবিত্র ঈদুল আজহার আগে এই পথের প্রধান অসুবিধা, যেহেতু কোরবানির পশুবাহী গাড়ি প্রবেশ করে গাবতলী হাটে, সে জন্য গাবতলী, আমিনবাজার এলাকায় জ্যাম লেগেই থাকে। তাই উত্তরে প্রবেশের সব গাড়িকেই শুরুতেই একটা বাধার মুখে পড়তে হয়।

এবার ঈদে উত্তরের পথে প্রধান কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও স্থানীয় প্রশাসন। ঢাকা থেকে বের হয়ে উত্তরের ১৬ জেলা এবং দক্ষিণের কয়েকটি জেলার গাড়িগুলোকে কিছুটা ধীরগতিতে চন্দ্রা পর্যন্ত যেতে হবে। চন্দ্রায় গিয়ে প্রথম বাধাটা আসতে পারে, সেখানে যেখানে-সেখানে গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানোয়। ঢাকা থেকে বের হওয়া গাড়িগুলো সেখানে গিয়ে চার লেনে প্রবেশ করে। কিন্তু লেনে প্রবেশের আগে থেকেই সেখানে কয়েকটি লেন দখলে রাখে অনেক গাড়ি। ফলে সেখানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের বসে থাকতে হয় জ্যামে। অথচ এই জায়গায় সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে খুব দ্রুতই গাড়িগুলো উত্তরের দিকে বিনা বাধায় চলতে পারবে।

আরেকটি প্রধান বাধা টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পর্যন্ত। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোল প্লাজা পর্যন্ত সড়কের চার লেনের কাজ চলমান। এখানে এখন দুটি লেনে গাড়ি চলে। সেই সঙ্গে রাস্তাতেও রয়েছে কিছুটা খানাখন্দ। ফলে কোনোভাবে যদি এই সড়কে গাড়ি বিকল হয়, তবে যানজট দীর্ঘ হয়। এবার ঈদের আগেই এ সড়কের যেসব খবর গণমাধ্যমগুলোয় আসছে, তাতে এখনই ৮, ১০-১২ কিলোমিটার জ্যাম ও গাড়ির ধীরগতির কথা শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমে গিয়েও গাড়ির গতি কিছুটা কমই থাকবে সড়কের কাচ চলমান থাকার কারণে। আর হাটিকুমরুলে গিয়ে যেহেতু গাড়িগুলো উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি জেলায় ভার হয়ে যায়, তাই অন্যদিকের সড়কগুলোর চাপ কমে যায়।

অবশ্য বর্তমানে সড়কের যে পরিস্থিতি তাতে এবার উত্তরের মানুষের যাত্রাপথে প্রধান ভয়ের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে চন্দ্রা ও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু-পূর্ব পর্যন্ত। যদি স্থানীয় প্রশাসন কঠোরভাবে এই এলাকার ট্রাফিক দেখভাল না করে, তাহলে চার লেনের রাস্তার কোনো সুফলই পাবে না উত্তরের জনগণ।

গত ঈদুল ফিতরেও শুধু টোল প্লাজায় ধীরগতি, সেতুর ওপরে গাড়ি বিকল হওয়া এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ঢাকা থেকে বগুড়া যেতেই সময় লেগেছিল ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা। অথচ অন্য স্বাভাবিক সময়ে এই পথের দূরত্ব সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টার। উত্তরের মানুষ হিসেবে আমার এবারের প্রত্যাশা থাকবে, ঈদে মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরুক। উত্তরের পথে সড়কে যেসব জায়গায় ব্যবস্থাপনার অভাবে যানজট পোহাতে হয়, সেখানে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশ বাড়তি নজর দিক, বাড়তি লোকবল নিয়োজিত করুক; চারলেন সড়কের সুফল পাক দক্ষিণসহ উত্তরের ১৬ জেলার মানুষ।