ডাকসু নির্বাচন-২০২৫ এবং প্রত্যাশা

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু) বলা হয় দেশের দ্বিতীয় সংসদ। কেননা, এখান থেকেই যুগে যুগে দেশপ্রেমিক মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের নেতৃত্বে গেছেন এবং সাধারণ মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, যেমন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এর ভূমিকা অগ্রগণ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, এটি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ডাকসু দেশে গণতন্ত্র এবং ইতিবাচক ধারায় সব সময় ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ডাকসু যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি দেশের মানুষের অধিকারের জন্যও তারা সক্রিয় থেকেছে। বিষয়টি এমন যে দেশের মানুষ কোনো অন্যায় আর অবিচারের প্রতিবাদ দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডাকসুর দিকে তাকিয়ে থেকেছে সব সময়। দেশের ক্রান্তিলগ্নে ঢাবি পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে। আর এ কারণেই ডাকসুকে বলা হয় সেকেন্ড পার্লামেন্ট। কিন্তু দুঃখ হলেও সত্য, ডাকসু ও হল সংসদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ বার নির্বাচন হলেও স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৮ বার! সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৯ সালে, সেটিও শেষ হয়েছিল বিতর্কের মধ্য দিয়ে; সুষ্ঠু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে যেন অলীক স্বপ হয়ে উঠেছিল।

সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ ছয় বছর পর ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রার্থীরা ভোট পেতে প্রচারণা চালাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ করছেন এবং তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইছেন। ইতিমধ্যেই সব প্রার্থী নিজেদের ইশতেহার প্রকাশ করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আশার বাণী দিয়েছেন।

আমাদের মতো পশ্চাৎপদ, কম শিক্ষার হারের দেশে শিক্ষার্থীরাই হচ্ছেন জ্ঞানের তথা সংস্কার আন্দোলনের ভ্যানগার্ড। এটি একমাত্র সংরক্ষিত শক্তি, যা একাধারে লড়াই করে আবার জ্ঞানের আলোকে সংগঠিত করে। এবার এমন এক সময় ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যখন মাত্রই শিক্ষার্থীরা আরেকটি রক্তের নদী সাঁতরে তীরে এসে দাঁড়িয়েছেন। মাত্র ৩৬ দিনে আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা করা হয়েছে।

এবার ডাকসু নির্বাচন হবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের বিশাল দেশবদলের চেতনার আলোতে। এমনিতেই নির্বাচনটি একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, তার ওপর চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান পরিপূর্ণভাবেই রাজনৈতিক ও জ্বলন্ত। ফলে ডাকসুর প্রতি প্রত্যাশা থাকবে—‘ডাকসু হবে সত্যিই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর, হলের অব্যবস্থাপনা, দখলবাজি ও সিন্ডিকেটের অপরাজনীতি বন্ধ করতে সাহসী পদক্ষেপ, প্রার্থীদের কাছ থেকে শুধু প্রতিশ্রুতির বন্যা নয়, বরং বাস্তব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ। সেই সঙ্গে দেশবাসী বুক ভরা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে দ্বিতীয় সংসদ থেকে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের নতুনভাবে সূচনা পর্ব শুরু হবে। এবারের ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক মুক্ত ছাত্ররাজনীতির সুস্থ ধারা বিরাজ করবে, নারীবিদ্বেষী নয়, বরং নারী ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস হবে। ভুলে গেলে চলবে না, ডাকসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করেছে।