সাম্প্রতিক সময় মানবিক সহযোগিতার প্রয়োজনে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন মরিয়ম, শামীম, মেহেদীরা। হারানো মায়ের খোঁজ কিংবা চিকিৎসার জন্য কিডনি বিক্রির মতো মানবিক অবস্থা দেখে সারা দেশের মানুষের মন কেঁদেছিল।
কিন্তু কয়েক দিন পরই সংবাদে নতুন খবর এসেছে তাদের মানবিক প্রয়োজন সম্পর্কে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। মানবতার আড়ালে কারও প্রয়োজন চাকরি কিংবা স্বাচ্ছন্দ্য জীবন। সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে তাদের এমন উদ্যোগ অনেকেই ইতিবাচকভাবে নেয়নি।
মানবিক সহযোগিতা যেকোনো মানুষের প্রয়োজন হতে পারে। মরিয়ম, মেহেদী, শামীমদের প্রয়োজনকেও সাধারণ মানুষ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাগুলো দেখার পর খুব সরলভাবেই মানুষের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়, যা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় অন্য বিষয় সামনে আসার পর সাধারণ মানুষ শুধু হতাশ হয়েছে।
মানবতার জন্যই যেখানে মানুষ, সেখানে এ রকম ঘটনাগুলো মানুষের ওপর বিশ্বাসের মাত্রা অনেকখানি কমিয়ে দেয়। ছোটবেলায় রাখাল বালক ও বাঘে খাওয়ার গল্প আমরা অনেকেই পড়েছিলাম। সেই গল্পের মতোই এ রকম ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের সঙ্গে নেহায়েত রসিকতা। এভাবে একদিন প্রকৃত অর্থেই যখন কেউ সহযোগিতার হাত চাইবে তখন আমরা সাহায্যের হাত এগিয়ে দিব কি না, তা এখন ভাবনার বিষয়।
সাধারণ মানুষ হিসেবে সচেতনতা বাড়ানো আমাদের নিজেদেরই দায়িত্ব। অনেকের মতে, গণমাধ্যম যাচাই-বাছাই করে সংবাদ প্রচার করলে এমন হতো না। কিন্তু বাস্তবতা হলো গণমাধ্যমের কাজ সংবাদের সত্যতা নিরূপণের পাশাপাশি সংবাদ প্রচারও।
একজন মেয়ে হারানো মায়ের খোঁজের জন্য রাস্তায় এসে কাঁদছে কিংবা একজন ছেলে মায়ের চিকিৎসার জন্য কিডনি বিক্রির পোস্টার শহরের দেয়ালে ছাপাচ্ছেন, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমের দায়িত্ব এই সংবাদগুলো পরিবেশন। ধীরে ধীরে যখন পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত জানা যায় সে বিষয়টাও গণমাধ্যম তুলে ধরে তাই দায়িত্ব পালনের দিক থেকে গণমাধ্যম প্রশংসার দাবিদার।
কারও প্রকৃত অর্থেই সহযোগিতার প্রয়োজন হলে এসব ঘটনা দেখার পর সে ব্যক্তিকেও হয়তো আমরা অবিশ্বাস করব। কিন্তু মানুষ হিসেবে এখানেই আমাদের মূল দায়িত্ব আর তা হলো বিশ্বাস করা। মানুষকে বিশ্বাস করতেই হবে সমাজে টিকে থাকতে হলে। বিশ্বাসের মধ্যেই সুন্দর সমাজ ও মানুষের বিবেক গড়ে ওঠে।
হয়তো এর পর থেকে বিশ্বাসের গভীরতা অনেকটা ক্ষীণ হয়ে যাবে কিন্তু মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাস হারানো যাবে না। হয়তো এমন হবে আমরা আবারও ভুল মানুষের জন্য আবেগ দেখাব। কিন্তু কে জানে হয়তো ১০ জনের মধ্যে ১ জনের প্রকৃত অর্থেই আমাদের সহযোগিতার হাত প্রয়োজন এবং সে যেন তার সহযোগিতা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, এটাই সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের চেতনা হওয়া উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল