চাল নিয়ে চালবাজি আর কত দিন
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আর বাঙালিদের প্রধান খাবার হলো ভাত। শারীরিক ও মানসিক শক্তির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে এ দেশের মানুষ ভাতকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। এ জন্য এ দেশে চিরাচরিত একটি কথা আছে, ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। কিন্তু কয়েক দিন পরপর চালের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিতে ভোক্তার পাশাপাশি বাঙালির এ ঐতিহ্যবাহী প্রবাদ বাক্যটাও যেন বারবার বিড়ম্বনায় পড়ে যাচ্ছে। আমনের এ ভরা মৌসুমে চালের দাম এভাবে যখন বৃদ্ধি পায়, তখন প্রশ্ন আসে, আদৌ এ দেশে ভাতের সঙ্গে বাঙালির কোনো সম্পর্ক আছে?
প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিনিকেটের দাম বাড়তি থাকায় সরু চাল নাজির শাইলের দামও কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা বাড়তি। আর মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত। যার ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের ভোক্তাদের। চালের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য ইতিমধ্যে সরকার চালের দামে শুল্ক কমিয়ে চালের আমদানি বাড়িয়ে, এমনকি বেসরকারি খাতকে চাল উৎপাদনে উৎসাহিত করে বিভিন্ন চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
কিন্তু চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমছে না। এদিকে ১৭ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়েছে, ‘শুধু মিনিকেট চালের মূল্যবৃদ্ধি সমগ্র চালের বাজারদর প্রতিফলিত করে না। সরকার খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তুলেছে; বিদেশ থেকে চাল আমদানিও অব্যাহত রেখেছে। দেশে চালের কোনো সংকট হবে না। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এখন প্রশ্ন হলো, সরকার যেখানে চালের দাম স্থিতিশীলতার জন্য এত পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে চালের মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে কারা ভূমিকা রাখছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘কিছু মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে নানাভাবে ভূমিকা রাখছেন’। এ ধরনের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এর আগেও বহুবার আলোচিত হয়েছে। তাঁদের উৎখাত করার জন্য অতীতেও বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি কাজে নিয়োজিত হয়েছে। কিন্তু ভোক্তারা কিছুতেই এর সুফল পাচ্ছেন না। বরং নানা কৌশলে বারবার ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছেন। অন্যদিকে, চাল উৎপাদনে অন্যতম ভূমিকাদাতা কৃষকেরা পরিশ্রম করা সত্ত্বেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলো খাদ্য। অথচ এ দেশে খাদ্য নিয়েই সারা বছর চলে বিভিন্ন কারসাজি। একবার চালের মূল্যবৃদ্ধি তো, আরেকবার দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি! আর এ কারসাজির তলে পিষ্ট হতে হয় নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের লোকদের। উচ্চ আয়ের লোকদেরও বিড়ম্বনায় পড়েই দ্রব্য কিনতে হয়। কিন্তু চাল নিয়ে এ চালবাজি আর কত দিন চলবে? সাধারণ ভোক্তাদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি নিরসন করতে অতিসত্বর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূর করতে হবে। সিন্ডিকেট ও মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারমূল্যের অস্থিতিশীলতা দূর করতে হবে। টিসিবির ট্রাক সেল ও ওপেন মার্কেট সেলের মতো (ওএমএস) অন্যান্য কার্যকর কর্মসূচি চালু করতে হবে। বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দেশের চাল উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং চালের আমদানি বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে যে করেই হোক চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধ করতে হবে। এ আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: মাইফুল জামান ঝুমু, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়