অধরাই রয়ে গেল সে ও পৃথিবী

অলংকরণ আরাফাত করিম

যাত্রীছাউনিতে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। পুরো রাস্তা ফাঁকা। একটাও গাড়ি নেই। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। যেকোনো সময় ঝুমবৃষ্টি এসে ভাসিয়ে দেবে শহরটাকে। একটা বাস আসতে দেখা গেল। দৌড়ে যাত্রীছাউনি থেকে কয়েকজন বাসে উঠে পড়ল। এত ভিড়ে আমার উঠতে ইচ্ছে করল না। বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম পরের বাসের জন্য। আমার এত তাড়া নেই। কোথাও যাওয়ারও জায়গা নেই। হঠাৎ অন্ধকারে ঢেকে গেল আকাশ। মেঘ গলা ছেড়ে ডাকছে, বিজলি ভয়ংকরভাবে চমকাচ্ছে। হুড়মুড় করে ঝুমবৃষ্টি নেমে এল। আমি যে জায়গাটিতে বসেছি, সে জায়গাটিতে ছাউনি নেই। মেঘে ডাকা মস্ত বড় একটা আকাশ আছে। আকাশের বুকের যত কান্না আছে, সব ঢেলে দিচ্ছে আমার মাথায়। আমি ভিজছি। আমার গায়ের জামা, গেঞ্জি সব ভিজছে। আমার খুব ভালো লাগছে। অন্য অনেকেই আমাকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে দেখছে। দুটি কিশোর আমার দিকে তাকিয়ে একজন আরেকজনের গায়ে পড়ে হাসাহাসি করছে। পাগলটাগল ভাবছে কি না, কে জানে।

আমি রাস্তার ওপাশে চেয়ে আছি। একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে আমাদের ছাউনির নিচে। ভিজে একাকার হয়ে গেছে সে। তার চুলে গড়িয়ে পড়ছে জল। দ্রুতই রাস্তা ভরে যাচ্ছে পানিতে। সে হাঁটু পর্যন্ত পার হয়ে অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে কী যেন ভাবছে। আমি প্রতিদিনই এসে এখানে বসে থাকি। কখনো চোখে পড়েনি মেয়েটিকে। আগে কখনো দেখছি বলে মনেও পড়ছে না। বৃষ্টির সঙ্গে পুবের এলোমেলো বাতাস তার চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। একি, মেয়েটি আসছে আমার দিকেই। তার চেহারা থেকে আমার চোখ সরানো উচিত, কিন্তু আমি সরাতে পারছি না।

আমি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটি খুব কাছে এল। তার শরীরের মিষ্টি গন্ধে আমি পাগল হয়ে গেলাম। এ নেশা ‘নেশাজাতীয়’ জিনিস থেকেও ভয়ংকর। আমি চোখ খুলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম, কিন্তু পারলাম না। দেহ-মনে ক্লান্তি এসে ভিড় করল। চোখে ঘুম নেমে এল। আমি অনেক চেষ্টা করার পরও তার সৌন্দর্য দেখতে পারছি না দেখে আফসোস করতে লাগলাম। দুচোখের সামনে সবকিছুই ঝাপসা হয়ে এল। আমি কি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি? একেবারেই চলে যাচ্ছি? মরে যাচ্ছি? আর কোনো দিন কি দেখতে পারব না এই মেয়েটিকে? এই অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা পৃথিবীটাকে! অধরাই রয়ে গেল সে ও পৃথিবী!