রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণিল একটি দিন
১ নভেম্বর ২০২২।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রথম ক্লাস ছিল সেদিন। সদ্য স্বপ্ন জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন নামক সোনার হরিণ দখল করা আমার মধ্যে ছিল তখন প্রাণোচ্ছল উচ্ছ্বাস। ভয় ও শঙ্কা কাজ করছিল সমানতালে। পরিবার ও প্রিয়জন ছেড়ে নতুন পরিবেশ, শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যে খাপ খাইয়ে নেওয়া অন্তত আমার মতো অন্তর্মুখী বৈশিষ্ট্যের মানুষের কাছে সহজ ছিল না। ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে থাকি সবকিছুতে। সময় আপন গতিতে চলতে থাকে। অভিজ্ঞতার ভান্ডারে যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। অজানাকে জানার কৌতূহল বাড়তে থাকে। বিজ্ঞ শিক্ষকদের সাহচর্যে জ্ঞানের পরিধিও সমৃদ্ধ হয়।
হাসি, আনন্দ ও আড্ডায় দিন অতিবাহিত হয়। দেখতে দেখতে চলে যায় একটি বছর। ফেলে আসা সময়গুলো স্বপ্নের মতো মনে হয়। এই তো এক বছর আগেও যাদের চিনতাম না তারা এখন আমার অতি আপনজন, আত্মার আত্মীয়। বন্ধু অভিধায় হলেও তারা আমার আপন ভাইবোনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। পরিবার ছেড়ে শত শত মাইল দূরে তারাই আমার সুখ–দুঃখের সঙ্গী।
১ নভেম্বর ২০২৩।
দ্বিতীয় বর্ষের শেষের শুরু। ঠিক এক বছর আগে একই দিনে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে সচরাচর একই দিনে পূর্বাপর বর্ষের ক্লাস শুরু হয় না। আমাদের বিষয়টা একদমই কাকতালীয়। বিশেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে বন্ধুদের মধ্যে আলোচনা চলে। একটা ছোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিই সবাই মিলে। সকাল থেকে ডিপার্টমেন্ট ভবন, অর্থাৎ ক্যাম্পাসের শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনের রাজা চত্বর বর্ণিল সাজে সজ্জিত করি। বেলা তিনটায় কেক কাটার মাধ্যমে হয় আয়োজনের উদ্বোধন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শহীদ ইকবাল ও অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান স্যার। তাঁদের বক্তব্য আমাদের আরও অনুপ্রেরণা জোগায়।
সভাপতি শহীদ ইকবাল বলেন, ‘বাংলা বিভাগে অনেক ব্যাচ এসেছে পূর্বে, কেউ এমন চমৎকারভাবে বর্ষপূর্তি আয়োজনের উদ্যোগ নেয়নি। তোমরা যা করেছ, প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র হলেও প্রাপ্তি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।’
কেক কাটার পরই শুরু হয় পূর্বপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে ব্যতিক্রম সব আয়োজন রাখা হয়। এবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল গান ও নৃত্য। গান পরিবেশন করেন বন্ধু ঝুটন বর্মণ। গানের পর্ব শেষ হলে শুরু হয় ধামাইল নৃত্যের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনা। গীতি ও রাফিনের দলের পরিবেশিত নৃত্য মুগ্ধ করে সবাইকে। অনুষ্ঠানটি বাংলা বিভাগের হলেও অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীর আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয় আমাদের অনুষ্ঠানের সব পর্ব।
স্মৃতির পাতায় দিনটির কথা আমৃত্যু থেকে যাবে।
লেখক: শাহ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়