বিসিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু কথা
আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় আজকাল খুবই কমন একটি শব্দ এবং এর কার্যকারিতা কতটুকু, সেটি নিয়েই আজকে কথা বলব। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে উচ্চশিক্ষা প্রদানসহ গবেষণামূলক কাজকর্ম করা হয়। সেই সঙ্গে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি জ্ঞানের উৎপত্তিও ঘটানো হয়। যদিও মধ্যযুগে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল অনেকটা ধর্ম ও ধর্মতত্ত্ব পড়ানোর কেন্দ্র।
আধুনিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ এককথায় অপরিসীম ও বিস্তৃত। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, আইন, শিল্প-সাহিত্য, আর্ট, কলা, সামাজিক বিজ্ঞানের বিস্তৃত বিষয়াদিসহ এককথায় সবকিছুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি। একাডেমিক কারিকুলামে জ্ঞানজগতের বিস্তৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি। গবেষণার কাজে নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনে (Method Innovations) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। নতুন নতুন জ্ঞানের ধারা সৃষ্টি এবং তা শিক্ষার্থীদের মধ্য ছড়িয়ে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা অনেকটা শোচনীয়!
এখানে না আছে নতুন নতুন জ্ঞানধারা, না আছে কোনো উদ্ভাবন, না আছে প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠেছে বিসিএস কর্মকর্তা তৈরির কারখানা। এখানে আছে কারিকুলামভিত্তিক পড়াশোনা শেষ করে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণজ্ঞান মুখস্ত করে বিসিএস পাস করে নিজের অবস্থান তৈরির প্রতিযোগিতা।
এখানে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পান করে চাকরির জন্য বাংলা, ইংরেজি, সাধারণজ্ঞান মুখস্ত করতে হয়। এখানে এমবিবিএস পাস করে বিসিএস দিয়ে চাকরি করতে হয়। ফলে দেশের বড় কোনো প্রজেক্টে কাজ করতে সাহায্য নিতে হয় চীনা/বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার, দেশের বড় কোনো মেডিকেল ট্রিটমেন্টের জন্য পাড়ি জমাতে হয় বিদেশে। এখানে আজকাল মেধাবী তৈরি হয় না, উল্টো মেধাবীদের ধীরে ধীরে মেধার অবক্ষয় ঘটানো হয়।
আমার একজন শ্রদ্ধেয় আইনের শিক্ষক শাহরিয়ার পারভেজ বলেছিলেন, ‘শুধু সফলতা নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যর্থতার পেছনেও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার আন্তরিক অবহেলা ও অবদান থাকে!’
কথাটি পুরোপুরি বর্তমান সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক এবং শিক্ষার সঙ্গে তুলনা করা যায়। যদিও এখনো আমাদের কিছু সম্মানিত শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীর মানোন্নয়নের জন্য কিন্তু তাঁদের সংখ্যাটাও নগন্য। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মানোন্নয়ন এবং এর গবেষণার ক্ষেত্রগুলোর চূড়ান্ত উন্নয়ন সাধন এখন সময়ের দাবী।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হোক উন্মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এখান থেকেই উদ্ভাবন হোক আধুনিক প্রযুক্তির সব উপকরণ, যা দেশ ও জাতির প্রাপ্র্য! শুধু বিসিএস না, আমরা চাই সব কর্মক্ষেত্রে আমাদের দেশের তরুণেরা পারদর্শী হোক।
লেখক: মো. জাকারিয়া হোসেন, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।