দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে, চাকমা রাজার সঙ্গে
পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধু নয়, দেশের দুর্গম ইউনিয়নগুলোর মধ্যে আছে রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার মৈদুং ও দুমদুম্যা। এ অঞ্চলের দুর্গমতা নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। তবে এবার এই দুই ইউনিয়নের কিছু অংশ স্বচক্ষে দেখতে পেলাম। যোগাযোগব্যবস্থার দুর্গমতার কারণেই এই ইউনিয়ন দুটির মানুষ নাগরিক সুবিধা তেমন পায় না।
দুমদুম্যা ইউনিয়ন সম্পর্কে সরকারের জাতীয় তথ্য বাতায়নে উল্লেখ আছে, ‘রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার জুরাছড়ি উপজেলার একটি সীমান্তবর্তী, পাহাড়বেষ্টিত দুমদুম্যা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম পায়ে হাঁটা, যার কোনো বিকল্প নেই। দেশের তথা উপজেলার মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন এ জনপদে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র, শিল্পকারখানা, ব্যবসাকেন্দ্র, এমনকি যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতা...ফলশ্রুতিতে, জনসাধারণ খুবই গরিব এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর।’
প্রায় একই অবস্থা মৈদুং ইউনিয়নেরও। অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থাই এই ইউনিয়নবাসীকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সুবিধা থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম তিন সার্কেলে বিভক্ত। সেগুলো হলো চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেল। সার্কেলের প্রধানদের ‘রাজা’ নামেই চেনেন পাহাড়িরা। চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় সম্প্রতি দুর্গম এই দুটি ইউনিয়নের শালবাগান, হাফ ফিলিং, বড়কলক, তেছড়ি, ফকিরাছড়া, জামেসছড়ি, পানছড়ি, শিলছড়ি প্রভৃতি জায়গা ভ্রমণ করেছেন। এ সময় তিনি মৌজাবাসী সাধারণ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তাঁদের সুবিধা–অসুবিধার খোঁজখবর নিয়েছেন। সামাজিক বিচারকাজ পরিচালনা এবং বিভিন্ন ইস্যুতে জনগণকে সচেতন করার ব্যাপারে গ্রামের প্রধান কার্বারি এবং মৌজার প্রধান হেডম্যানদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া মৌজাবাসী কর্তৃক গ্রামীণ পাড়াবন (ভিসিএফ) সুরক্ষা ও পরিচর্চায়ও গুরুত্বারোপ করেন। এই দুই ইউনিয়নে পরিচালিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টংগ্যার উন্নয়ন কার্যক্রমেরও খোঁজ নেন। চাকমা রাজা এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জলের অভাব এবং দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থার কথা সরকারের বিভিন্ন মহলে তুলে ধরে এর প্রতিকারের জন্য চেষ্টা করবেন বলে স্থানীয় জনগণকে জানিয়েছেন। চাকমা রাজার গ্রাম পরিদর্শনের সময় সঙ্গী ছিলাম আমিসহ কয়েকজন। সেখানকার টুকরা কিছু ছবি তুলে ধরলাম।