অটোরিকশার দৌরাত্ম এবং জনভোগান্তি

ছবি: প্রথম আলো

আজকাল রাস্তাঘাটে চলাচলে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ত্রিচক্রযানের দৌরাত্ম খুব বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের অল্প দূরত্ব জয় যেমন সহজ হয়েছে, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে বেশ বিপদের কারণও হয়েছে। শহরগুলোতে অত্যাধিক মাত্রায় জ্যাম তৈরি হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনাও সংঘটিত হচ্ছে।

এসব চালকের বেশির ভাগের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কীভাবে এত চালক ব্যস্ততম সড়কে এবং শহরে অবাধে চলাচল করেন, বিষয়টা বেশ উদ্বেগজনক! যে কেউ চাইলেই এসব যানবাহন ক্রয় করে রুজিরোজগারের জন্য রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন। সাধারণ মানুষও এসব যানবাহনে উঠছেন। এতে মানুষের দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশঙ্কা সব সময় থেকেই যাচ্ছে।

গত কয়েক দিনে চোখের সামনে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অটোরিকশার তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। একটি রংপুরের মাহিগঞ্জে, অপর দুটি কুড়িগ্রাম সদরে। এসব দুর্ঘটনা চোখের সামনে ঘটার কারণে অটোরিকশা, মিশুকচালকদের (প্রায় সবার) গাড়ি চালনার ন্যূনতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই বলে মনে হয়েছে। কুড়িগ্রাম শহরের একটি প্রাত্যহিক দৃশ্য হলো অটোরিকশার জ্যাম, দীর্ঘ সারি। কুড়িগ্রামের মতো ছোট শহর পার হতে যে সময় লাগার কথা, প্রায়ই তার ব্যত্যয় ঘটে কেবল এ রকম ধীরগতির যানবাহনের কারণে।

এসব যানবাহন রাস্তার যেকোনো স্থান থেকে যখন–তখন যাত্রী ওঠায়। নতুন অবস্থায় সাইড লাইট থাকলেও একটু পুরোনো হলে অনেক গাড়িতে সাইড লাইট আর দেখা যায় না। তা ছাড়া একটু সময় নিয়ে যে সাইড লাইট দিতে হয় কিংবা সাইড নিতে হয়, সেটাও তারা হয়তো জানেন না কিংবা মানেন না। না মানার কিংবা তোয়াক্কা না করার একটা যুক্তি আছে, তা হলো যাত্রী ওঠানো।

কোনো অটো অন্য কোনো অটোর আগে যাত্রী ওঠাবে, তার একটা প্রতিযোগিতা আছে। এতে পেছনে থাকা কোনো যান যেমন সাইকেল, মোটরসাইকেল কিংবা অন্যান্য যানবাহনের চালকদের হকচকিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, এতে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ ঘটে যায়।

শুধু তা–ই নয়, এমনো ঘটনা আছে যে এসব অটোরিকশা কিংবা মিশুকের কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরও উল্টো মোটরসাইকেল আরোহীকে জরিমানা করা হয়েছে। যখন যুক্তি–তর্ক থেকে প্রমাণ মেলে যে অটোরিকশাচালকের দোষে এমনটি ঘটেছে, তখনো কেবল সেসব চালকদের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে মোটরসাইকেল আরোহীকে আবেগের বেড়াজালে বন্দী করা হয় এবং আর্থিক সাহায্য বাবদ টাকাপয়সা নেওয়া হয় (এক বন্ধুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা, রাজারহাট, কুড়িগ্রামে)।

এসব অটোরিকশা কিংবা মিশুকচালকদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি সমবেদনা বোধ নিশ্চয়ই আছে। তথাপি সার্বিক দিক বিবেচনাপূর্বক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটা যথাযথ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত এই মর্মে যে এসব যানবাহনের চালককে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে হবে। তাতে যাঁর যখন খুশি, তখন এসব যানবাহন ক্রয় করে রাস্তায় নামতে পারবেন না।

তাঁরা রাস্তায় চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুনও জানবেন। প্রয়োজনে এসব যানবাহনের প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির লাগাম টেনে সীমাবদ্ধতার গণ্ডিতে রাখা যেতে পারে। এতে দুর্ঘটনা এবং জনভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

লেখক: সঞ্জিব কুমার রায়, শিক্ষক, কুড়িগ্রাম।