কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক
সরকারি চাকরিতে কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তাজা প্রাণের বিনিময়ে গণ–আন্দোলন ও গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটেছে ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এই সময়ে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন করা হলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে তিনটি নির্বাচন আয়োজন করা হয়। বিগত সরকারের আমলে প্রতিটি খাতের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ ধমনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
বিগত সরকারের আমলে কখনো কখনো কোনো যৌক্তিক সমালোচনা করলেও হুমকি দেওয়া হতো, স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, জামায়াত–শিবিরসহ বিভিন্ন ট্যাগ দেওয়া হতো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে মানুষের মুখ প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যেসব লেখক–সাংবাদিকেরা সাহসী পদক্ষেপ নিতেন, তাঁদের অনেকেই জেল–জুলুমের শিকার হয়েছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করা সম্ভব হলেও সিন্ডিকেট কারা নিয়ন্ত্রণ করে, সেই বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করেছেন। দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট হলেও ইতিমধ্যে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস অন্তবর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ সময়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি দেশকে গড়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এই সময়ে এবং পরবর্তী সময়ে যখনই নির্বাচিত সরকার গঠিত হবে, কিংবা যে সরকারই দেশ পরিচালনা করুক না কেন, সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরা, সমালোচনা কিংবা ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়গুলোসহ সব বিষয়ে মানুষ যেন গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন, যৌক্তিক কথা বলতে পারেন, সেই অধিকার যেন পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় এবং সব সময় বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে নতুন সরকারকে। গঠনমূলক সমালোচনায় সরকারের ভুলগুলো বের হয়, দায়িত্ববান ব্যক্তিদের মধ্যে অপরাধ করা ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচিত হয়, ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে গাইডলাইন পাওয়া যায়। এসব বাস্তবতাকে মাথায় রেখে তাই বর্তমান বিদ্যমান সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ মানুষের কথা বলার অধিকার খর্ব করে, এমন সব আইন সংশোধনসহ মামলা–হামলার হয়রানি বন্ধ করে মানুষের কথা বলার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে, তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে সবার কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ।
*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]