দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ব্যয়ে হিসাবি হচ্ছে উচ্চ-মধ্যবিত্তরাও

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। নিম্নবিত্তদের অবস্থা শোচনীয়। মধ্যবিত্তরাও এখন দামের চাপে ব্যাগের তলানিতে পণ্য নিয়ে ফিরছেন ঘরে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে চাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডালসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এসব পণ্যের মূল্য আকাশ ছোঁয়ায় একদিকে ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় পণ্য কম কিনছেন, তেমনি কমেছে বিক্রেতাদেরও বিকিকিনিও।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবকিছুর দাম বাড়তি। দাম শুনে অনেকে পণ্য না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যেটা না নিলেই নয়, সেসব পণ্য এক কেজির জায়গায় আধা কেজি নিচ্ছেন। আগে যাঁরা পুরো প্যাকেট নিতেন, তাঁরা দু-চার টাকা কমে খোলা পণ্য কিনছেন। দ্রব্যমূল্যের এ অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন দেশের সিংহভাগ মানুষ। অনেকে আবার সংসারের খরচ কমাতে কমাতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে ভুলে গেছেন।

কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারে বাজার করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহানুর রহমান। তাঁর কাছে ‘কী কী বাজার করছেন’ জানতে চাওয়া হলে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করলেন। ‘এই যে দেখেন কী কী কিনেছি বলে’ মেলে ধরেন তাঁর বাজারের ব্যাগটি। এ সময় তাঁর ব্যাগে কিছু মুলা দেখতে পাওয়া যায়। আর কিছু কিনবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আরও কয়েকটা দোকান ঘুরে তারপর কিনব।’

শাহানুর রহমানের ভাষ্য, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আরও অনেকের মতো তাঁরও নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। যেহেতু তাঁর আয় বাড়েনি, সেহেতু জিনিসপত্র কম কিনে, কম খেয়ে কোনোভাবে দিন পার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই অবস্থা দেশের হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, তিনি নানাভাবে খরচ কমাতে চেষ্টা করছেন। এর জন্য সম্ভাব্য একটি তালিকা তৈরি করেছেন তিনি। তাতে দেখা যায়, বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে দিয়ে তিনি ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছেন।

তালিকায় রয়েছে—মাসিক বই কেনা বন্ধ, সংবাদপত্র কেনা বন্ধ, যাতায়াতে উবারের পরিবর্তে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার, সয়াবিন তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়ে ১০ কেজির পরিবর্তে ৮ কেজি ব্যবহার ইত্যাদি। এ ব্যাপারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তালিকাটি কিছুটা ব্যঙ্গাত্মকভাবে তৈরি করা হলেও বাস্তবতা এর থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয়। পাঁচজন সদস্যের সংসারে আমার একার উপার্জনে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি মিলিয়ে ৪৫ হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়। সঙ্গে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার খাতে খরচ তো আছেই। সুতরাং খাবারদাবারসহ অন্যান্য খাতে খরচ কমিয়ে আনার বিকল্প নেই।’

এ ব্যাপারে কথা বলা হয় আরেকজন লেখক জাকির তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, উন্নয়ন যদি মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য না আনে, তাহলে সেই উন্নয়ন শুধু রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর। আধপেটা মানুষ ক্ষুধায় চোখে শর্ষে ফুলই দেখতে পায়, উন্নয়ন নয়। এখন নিম্নমধ্যবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্ত সমাজও দৈনন্দিন জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছে। পারিবারিক বাজেট কাটছাঁট করছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ বটে। তবে একমাত্র কারণ নয়। এমনকি প্রধান কারণও নয়। কারণ, হচ্ছে দুর্নীতি ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সমস্যা হচ্ছে সরকার তাদের বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।

লেখক: ছড়াকার, ফিচার লেখক