শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষাসংক্রান্ত আন্দোলন

আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ পেছনের দাবিতে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরাছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

আমার ছেলে ফারহান এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এ মাসের ১৭ তারিখে তাঁর পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। ২ তারিখ থেকে সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। সকালবেলা মাথাব্যথা দিয়ে শুরু হয়েছিল, তারপর বিকেল থেকে জ্বর শুরু। অনবরত পাঁচ-ছয় দিন ১০৩, ১০৪ ও ১০৪.৫ ডিগ্রি জ্বর ছিল। জ্বর যখন কমল, বমিভাব প্রবল হলো। এক সন্ধ্যায় ছয়–সাতবার বমি হলো। এ সময়ে তার পড়া রিভাইজ করার কথা ছিল। কিন্ত অতিশয় দুর্বল হয়ে বিছানায় পড়ে রইল। যতক্ষণ শক্তি ছিল, জ্বরের মধ্যেই পড়ার চেষ্টা করেছে। এখন আর শক্তি অবশিষ্ট নেই। গত রোববার (১৩ আগস্ট) তার অ্যাডমিট কার্ড আনতে কলেজে গিয়েছিলাম। দেখলাম আরও কিছু ছাত্রের অবস্থা আমার ছেলের মতো।

বিষয় হলো করোনাকালে আমরা এ সরকারের অনেক উদারতা দেখেছি। তারা এইচএসসি আর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনেক ছাড় দিয়েছে। তাহলে এখন তাদের এই অনড় অবস্থানের কারণ কী? এসব শিশুতোষ শিক্ষার্থী (কিছু শিক্ষার্থী) বইখাতা ফেলে দিয়ে পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন জেলায়। তাদের ভাষ্য এড়িয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতাকে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। কী তারা বলতে চায়, তাদের কথা কত দূর রাখা সম্ভব, সেই চেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান হচ্ছে না।

যেখানে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৪০০ পেরিয়েছে। সত্তরের অধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সেখানে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ঠিক সময় অনুষ্ঠিত করার জন্য এতটা অনড় থাকা কতটুকু যৌক্তিক?

অসুস্থ শিক্ষার্থীদের সিকবেডে পরীক্ষা দেওয়াতে চাইলেও তাদের কি পরীক্ষা দেওয়ার শক্তি আছে? মনে হচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এডিস মশার প্রবেশ নিষেধ। এ রোগ সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না।

আমি ইংল্যান্ডে বার অ্যাট ল করতে গিয়েছিলাম। দেখেছি ছাত্রদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে, যেন পরীক্ষার সময়ে তাদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঠেকানো যায়। আমার দেশে আমরা এত অসহায় যে মানসিক স্বাস্থ্য দূরে থাক, শারীরিক অসুস্থতার কারণে কেউ তিন মাস পর আরেকটা সিট পাবে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য, তার ব্যবস্থা নেই। অপেক্ষা করতে হবে এক বছর।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রতিবছর সামাল দিতে আমরা ব্যর্থ হই। ঝরে যায় অনেক প্রাণ। প্রতিবছর আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হই। তাহলে শিক্ষা অধিদপ্তরের কি উচিত নয় বছরে দু–তিনটি সিটে পরীক্ষা নেওয়া; এ লেভেল, ও লেভেলের পরীক্ষার্থীরা তো এই সুযোগ পাচ্ছেন। যদিও তাদের সারা বিশ্বে একই প্রশ্নে পরীক্ষা হয়। এসব উদ্যোগ না নিলে অর্বাচীন কিশোর–কিশোরীদের আন্দোলনের সম্মুখীন বারবার হতে হবে। সরকার এবং শিক্ষার্থীদের অবস্থার চাপে নাকাল হতে হবে। আশা করি, সরকার করোনার সময় যেমন শিক্ষার্থীদের প্রতি সদয় থেকেছে ও তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনজনিত উত্তেজনায় তা ভুলে যাবে না।

*লেখক: অনিন্দিতা রহমান, আইনজীবী, ঢাকা