নোমোফোবিয়া ও যান্ত্রিক দাসত্ব

প্রতীকী ছবি

মোবাইলন ফোন কাছে না থাকার আতঙ্ক বর্তমানে নোমোফোবিয়া নামে পরিচিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন নামক যন্ত্রটির ব্যবহার এতটাই বেড়েছে যে মুঠোফোনের অনুপস্থিতি আমাদের কাছে ভয়ানক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণায় জানা গেছে, বর্তমানে আমাদের দেশে এক–তৃতীয়াংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী চরম মাত্রায় নোমোফোবিয়ায় আসক্ত। যেখানে একজন শিক্ষার্থীর দিনের বেশির ভাগ সময় পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জনের পেছনে ব্যয় করা উচিত, সেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মুঠোফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবলীলায় নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করছেন এবং মুঠোফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তাঁরা অনলাইন জগতে সময় কাটাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে তাঁদের কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

নোমোফোবিয়ায় আসক্তির ফলে মানুষ এখন মুঠোফোন থেকে দূরে থাকতে পারছেন না, বিচলিত হয়ে পড়ছেন ও নিঃসঙ্গবোধ করছেন, যা তীব্র মানসিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো নোমোফোবিয়ায় আসক্ত হওয়া সত্ত্বেও আমরা সেটা অনুভব করতে পারছি না বরং সানন্দে আসক্তির চরম মাত্রায় উপনীত হচ্ছি।
একটা সময় ছিল যখন মানুষ শুধুমাত্র যোগাযোগের ক্ষেত্রে কথা বলার জন্য মুঠোফোন ব্যবহার করত। মুঠোফোনকে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগানো হতো। মানুষ তাঁর মুঠোফোনকে নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যায়, মুঠোফোনে কথা বলা, প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়াও মানুষ নিরর্থক বিষয়ে মুঠোফোনে সময় অপচয় করছেন। মানুষ নিজের মুঠোফোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বরং মুঠোফোন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুঠোফোন নামক যন্ত্রকে আমরা নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর পরিবর্তে নোমোফোবিয়ায় আসক্ত হয়ে নিজেরাই যান্ত্রিক দাসত্বকে বরণ করে নিচ্ছি।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নোমোফোবিয়ায় আসক্ত ব্যক্তি মুখোমুখি কীভাবে একজন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হয় তা ভুলে যান। নোমোফোবিয়া আমাদের সবার জীবনে বিভিন্নভাবে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসাধন করছে। নোমোফোবিয়ার প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকে অবসর সময়ে অনলাইন জগৎ থেকে বেরিয়ে বাস্তব জীবনের কাজগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজের সৃজনশীল চিন্তা ও মানসিক বিকাশ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নোমোফোবিয়ার তীব্র আসক্তি কাটিয়ে উঠতে হবে।

*লেখক: সৈয়দ সাদিয়া আলীম, শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।