এডিস মশার ইন্টারভিউ

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

মশাছবি: সংগৃহীত

হাতিরঝিলের প্রধান কার্যালয়ে এডিশ মশার কেন্দ্রীয় সভাপতি খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। লাখ লাখ এডিস মশা তার নিরাপত্তায় ডানা ঝাঁপটিয়ে নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করেছে। কিছুক্ষণ আগে বিশ্ব মশক সম্মেলনের অনলাইন কর্মশালা শেষ হলো। পৃথিবীর নানা প্রান্তের প্রতিনিধিরা সে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। তারা বাংলাদেশের মশা নিয়ে সভায় তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে মশক নিধনে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তারা খুবই চিন্তিত। তা ছাড়া বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার দুই মেয়র যেভাবে দিবারাতি মশক উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে, তা রীতিমতো ভয়ংকর।

পশ্চিমা বিশ্বের মশক প্রতিনিধিরা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের মশক প্রতিনিধিরা এ মহাদুর্যোগে বাংলাদেশের মশাদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের মশক নিধনে নেওয়া পদক্ষেপগুলো তারা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। এর আলোকে ভবিষ্যতে কীভাবে বাংলাদেশের মশক সম্প্রদায়কে রক্ষায় আরও টেকসই ভূমিকা রাখা যায় সে বিষয়ে বিশেষ দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান সময়ের এ ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের মশক কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে হাতিরঝিল কার্যালয় থেকে যেভাবে নেতৃত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে জুম মিটিংয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়। সর্বশেষ বাংলাদেশের মশককুলের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মশক সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সভা সমাপ্ত করে সভাপতি খুবি ক্লান্ত। তার জন্য বিভিন্ন ঘাসের মিশ্রণে রস প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘাসের রস আস্বাদন করে সভাপতি তৃপ্ত হলেন। বোকা মানব কুল। তোমরা মনে করেছ তোমাদের রক্ত আমাদের প্রধান খাবার। তোমরা হাঁদারাম হাঁদারামই রয়ে গেলে। আমাদের প্রধান খাবারতো ঘাস। যত দিন পৃথিবীতে ঘাস আছে, জলা আছে, এক ফোঁটা পানি আছে তত দিন আমরা থাকব। তোমাদের রক্ত তো লাগে আমাদের প্রজনন কাজে। আমাদের বংশ বিস্তারে। আমাদের বংশ রক্ষায় রক্ত চাই। লাল টকটকে তাজা রক্ত! ক্ষুধা নিবারণে নয়। আমাদের প্রজন্ম রক্ষায় আমরা বইয়ে দেব রক্তের স্রোত। যে আমাদের বাধা দেবে, তাকেই আক্রমণ করা হবে। ভয়ংকর আক্রমণ! মশক বাহিনীর সভাপতি মনে মনে হাসে। পরম তৃপ্তিতে তার চোখ বুজে আসে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সে।

হঠাৎ সেক্রেটারির ডাকে ঘুম ভাঙে।

স্যার, এক আদমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়।

কী তার পরিচয়? আর কোন কুমতলব নিয়ে এসেছে সে? দুপেয়েদের মাথায় তো শুধু বদ মতলব।

স্যার, সে নাকি দৈনিক হাউকাউ পত্রিকার সাংবাদিক। আপনার ইন্টারভিউ নিতে চায়।

বল আমার দেখা হবে না।

খুব রিকোয়েস্ট করতাছে স্যার। আপনার জন্য কিছু দামি ঘাসের রস উপঢৌকন নিয়ে আসছে।

হুম। আদমি হলেও কিছু আদব লেহাজ আছে দেখছি। কই ডাক তাকে।

স্যার আসব।

জি আসুন আসুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দৈনিক হাউকাউ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি চিকন আলী প্রবেশ করে।

তা আপনি চিকন আলী।

জি স্যার।

আমি মনুষ্যকুলকে তেমন একটা পাত্তা দিই না। কারণ, জানেন তো পৃথিবীটা হচ্ছে মশার। তাদের রাজ্যে আপনারা হচ্ছেন প্রজা। কিন্তু আপনারা মনুষ্যকুল সেটা মানতে চান না। তবে আপনার আদব লেহাজ ভালো বলে আপনার দর্শন দিলাম।

সে আমার সাত পুরুষের ভাগ্য। চিকন আলীর দন্ত হাসিতে উদ্ভাসিত।

তো কী ইন্টারভিউ নিবেন বলেন। চিকন আলী একটা হালকা কাশি দেয়।

জনাব আজকের দিনটা আমার জন্য বিশেষ স্মরণীয়। আমি জীবনে বহু রথী–মহারথীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থেকে শুরু করে অনেক বিখ্যাত মানুষের ইন্টারভিউ কভার করেছি কিন্তু আপনার মতো হাই প্রোফাইলের কারও সাক্ষাৎকার আমার জীবনে প্রথম। আমার এখনো বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে আমি আপনার মতো একজন মহান কারও সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

তোমার মতো এমন ভদ্র আদমি খুব একটা দেখা যায় না। তোমার জন্য মশককুলের পক্ষ হতে অভিবাদন। এখন কী তোমার প্রশ্ন বল?

দৈহাকাপ্র (দৈনিক হাউকাউ প্রতিনিধি)—আপনার শরীর এখন কেমন?

মকেস (মশা কেন্দ্রীয় সভাপতি)—ভালো

দৈহাকাপ্র—আগামীর বিশ্বে মশাদের অবস্থান কী?

মকেস—আসলে আগামীর বিশ্ব মশাদের বিশ্ব। তোমাদের দিন ফুরিয়ে আসছে। মশাদের বিরুদ্ধে তোমাদের যত অস্ত্র আছে, তার প্রয়োগ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে তোমাদের আর করার কিছুই নেই। তোমরা অক্ষম, বোকা...হা হা হা!

দৈহাকাপ্র—হয়তো আপনার কথাই ঠিক। কারণ, এখন কয়েলের ওপর মশা ডিম পাড়ে।

মকেস—এবার বুঝলে তো?

দৈহাকাপ্র—জি জনাব। বুঝেছি। আচ্ছা, বাংলাদেশের সরকারের সাম্প্রতিক মশকনিধন কর্মসূচি সম্পর্কে আপনার অভিমত বলুন।

মকেস—শুনেছি তারা বিভিন্ন কমিটি করেছে। একদম ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা কমিটি। এ কমিটির লোকজন নাকি মশাদের নিধন করবে। যত্তসব ফালতু। হা হা হা।

দৈহাকাপ্র—তার মানে আপনি বলছেন বাংলাদেশে সরকারের এ উদ্যোগ কাজে আসবে না।

মকেস—নাহ্‌। কারণ, আমরা মশক প্রজাতি হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। মানুষ আজ যা চিন্তা করে, তা আমরা আরও এক শ বছর আগেই ভেবে রেখেছি। তারা যে কী কী করতে পারে। কী তাদের মুরোদ, তা আমাদের জানা আছে।

দৈহাকাপ্র—তার মানে আপনাদের বিরুদ্ধে কিছুই করার নেই?

মকেস—দেখ। দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বাদশা আমাদের একটা ল্যাংরা মশার কাছে পরাভূত হয়েছিল। সেখানে আমরা যারা শক্তিশালী মশা, তাদের কাছে তোমরা তো কিছুই না।

দৈহাকাপ্র—তা ঠিক, তা ঠিক

মকেস—তোমার বিবেচনাবোধ ভালো বৎস।

দৈহাকাপ্র—অশেষ ধন্যবাদ জনাব। আচ্ছা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন।

মকেস—ও তোমাদের তো আবার দুটি মেয়র আছে। ওরা আসলে বিশ্ব মশক কমিটির হিট লিস্টে আছে। মেয়র হওয়ার পর থেকে মশকনিধনে ওরা ওঠে পড়ে লেগেছে। কী এক ফগার মেশিন কিনেছে। তা দিয়ে ধুয়া বেরোয়। ও ফগার মেশিন আবার বেশিক্ষণ চালানো যায় না। একটু চালালেই গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ও নিয়ে ওরা নাকি মহান মশক প্রজাতিদের নির্মুলের স্বপ্ন দেখে। যত্তসব বোকাচোদার দল। হা হা হা। ওদের বলে দিও মশাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা বন্ধ করতে। মশারা অ্যাকশনে গেলে কিন্তু ওদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

দৈহাকাপ্র—জি জনাব। আপনার বক্তব্য আমি পৌঁছে দেব।

মকেস—আর কোনো প্রশ্ন বৎস?

দৈহাকাপ্র—সম্প্রতি মশকনিধনে প্রাকৃতিক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেমন কিছু ব্যাঙের চাষ করা হচ্ছে, যাঁরা মশা খেয়ে সাফ করে ফেলবে। কিছু মশারও চাষ হচ্ছে, যাঁরা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। এতে করে কি মশক প্রজাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার নয়?

মকেস—দেখ, মশাদের পাঠানো হয়েছিল পাপীদের শায়েস্তা করার জন্য। যত দিন পৃথিবীতে পাপ থাকবে, তত দিন মশারাও স্বগৌরবে টিকে থাকবে।

দৈহাকাপ্র—আপনার বক্তব্য পরিষ্কার।

মকেস—ধন্যবাদ বৎস।

দৈহাকাপ্র—ভালো থাকবেন। আপনার ইন্টারভিউ কভার করতে পেরে আমি অত্যন্ত গৌরবান্বিত।

মকেস—তোমার আদব লেহাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তুমি একজন উন্নতমানের আদমি। মশককুলের পক্ষ থেকে তোমাকে লাল সালাম।

* লেখক: সুলতান মাহমুদ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শরীয়তপুর।