রঙিন ঘুড়িতে রাঙল আকাশ, অট্টহাসি-ঘুড়ি-আবিরে মাখামাখি
মুখে অট্টহাসি, হাতে ঘুড়ি, অফুরন্ত আড্ডার সঙ্গে আবিরে মাখামাখি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইনফরমেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল তরুণ–তরুণীর। শাড়ি-পাঞ্জাবিতে সেজে বিভিন্ন আকার-আকৃতি ও রংবেরঙের ঘুড়িতে রাঙল ক্যাম্পাসের আকাশ। সবকিছু মিলে যেন তৈরি হলো এক মনোরম দৃশ্য। শুরুটা হয়েছিল ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ ও একঘেয়েমি কমাতে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা থেকে। টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানকার একাডেমিক চাপে যেন ছাত্রদের এই বিশাল সুন্দর ক্যাম্পাসও কারাগার মনে হয়। সেই চাপের কারাগার থেকে মুক্তির সঙ্গে একটু আনন্দফুর্তি করার মনের দাবিতে এ ‘ঘুড়ি উৎসব’।
বেলা যত যায় আয়োজন যেন আরও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বেড়েছে উৎসবের আমেজ। ঘুড়ি ওড়ার শোঁ শোঁ শব্দ মনে করিয়ে দেয় পুরোনো গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। ঘুড়ি ওড়ানোর সময় মনে হচ্ছিল যেন সবাই ছেলেবেলায় ফিরে যাচ্ছি।
আবার অনেকের জন্যই এটা ছিল তাদের ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথম অভিজ্ঞতা। এরপর ছিল আবির খেলার আয়োজন। এদিকে সবাই আবির মাখাচ্ছিল একে অপরকে, আবার অনেকে রঙের সঙ্গে তাদের হতাশাগুলোও উড়িয়ে দিচ্ছিল হাওয়ায়। ছবি তোলা ও গানবাজনার আয়োজনও ছিল। রং মাখার পর ছিল বল নিক্ষেপ খেলার আয়োজন, যেখানে সঠিক নিশানায় লাগাতে পারলেই পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের জন্য ছিল বিশেষ পুরস্কার।
সবশেষে সবার চোখেমুখে যখন ক্লান্তির ছাপ, তখনই চলে আসে নাশতা ও ঠান্ডা পানীয়। সন্ধ্যায় শুরু হলো আরেকটি মজার খেলা। সেখানে প্রত্যেককে একটি করে টোকেন দেওয়া হয়। টোকেনগুলোতে ছিল বিভিন্ন সিনেমার নাম। আর যার ভাগ্যে যে টোকেন পড়েছে, তাকে সিনেমার নাম মুখ দিয়ে না বলে অভিনয় করে বোঝাতে হয়েছিল। আর সবশেষে সবাই মিলে বসে শুরু করলাম গানের আসর। গানে জয়িতা আর মাজহারুল ছিল গিটারে। আর বাকি সবাই সুরে সুর মিলিয়ে রাত আটটা পর্যন্ত গানের আসর উপভোগ করলাম। জীবনের ব্যস্ততা হয়তো থেকে যাবে, কিন্তু মাঝের এই স্বল্প সময়গুলোই যেন সেই দীর্ঘ ব্যস্ততাগুলোকে সাময়িকভাবে অদৃশ্য করে রাখবে।
আয়োজনের সম্পূর্ণ ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করার দায়িত্ব ছিল সাজিদের। সাজিদ জানায়, বায়োইনফরমেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে এই চাপ যেন আরেকটু বেশি। কারণ, একই সঙ্গে লাইফ সায়েন্সের টপিকগুলো গিলতে হয় আর প্রোগ্রামিং হজম করতে হয়। আর এই চাপ কমাতে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা যেন একেকজন দেবতাদূত। সুযোগ পেলেই নানা ধরনের আয়োজন করে, যেগুলো ক্যাম্পাসের অন্যরা কেউ সচরাচর করে না।
মুন জানায়, ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে এমন কোনো উৎসব কাউকে করতে দেখিনি। তবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এর প্রচলন থাকলেও টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন কোনো উৎসব করাই একটা কঠিন ব্যাপার।
*লেখক: রায়হান আবিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]