সাত কলেজের অধিভুক্তি, দিন দিন ভারী হচ্ছে আহাজারি
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজকে গুণগত মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু অধিভুক্তির পরপরই তৈরি হয় দীর্ঘ সেশনজট, যে জটের কোনো সুরাহা হয়নি আজ পর্যন্ত। কলেজগুলো যখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল, তখন সবার নিজস্বতা ছিল। আর এখন সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে নির্ধারিত হয় বলে দায়িত্বের বিষয়ে সাত কলেজের প্রশাসন অনেকটাই নীরব কিংবা এড়িয়ে যায়।
৮-৯-১০ মাস চলে যায় একেক বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করতে। অপর দিকে পরবর্তী বছরের পরীক্ষাও শুরু হয়ে যায়। ফলাফলের পর দেখা যায়, কেউ নন-প্রোমোটেড কিংবা এক-দুই বিষয়ে ফেল করলেও সময় নিয়ে যে একটু পড়াশোনা করবেন, সেই সুযোগটা আর থাকে না। দিন শেষে হাজারো টাকা ব্যয়ে ইম্প্রুভ বা মানোন্নয়ন দিয়েও পাসের মুখ দেখতে পান না। ফলস্বরূপ বছর বছর ফেলের বোঝা টানতে হয়।
অধিভুক্তির এত বছর অতিক্রম হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত টেকসই কোনো সমাধান হয়নি। সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে গোঁজামিল দিয়ে একটা সমাধান দেওয়া হয় স্থায়িত্ব নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না করেই। কিংবা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো নানা অমানবিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের প্রসাশনের এমন অসহযোগিতা শিক্ষার্থীদের জন্য বেদনাদায়ক ও অমানবিক। শিক্ষার্থীরা ফলাফল কিংবা পরীক্ষাবিষয়ক নানাবিধ ঝামেলার জন্য পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারেন না। অনেকেই হতাশ হয়ে পড়াশোনা ছাড়ার উপক্রম এবং অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন।
সাত কলেজের দুই-তিনটা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রাচীনতম। যেখানকার শিক্ষার্থীরা এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব যৌক্তিক আন্দোলন–সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাকিগুলোও তুলনামূলক ভালো এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধিভুক্তির ফলে আজ সবাই পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। পুরোনো সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য হারাতে বসেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, সাত কলেজের শিক্ষকদের অবহেলা ও অসহযোগীতা, আর সাত কলেজ বলছে ঢাবির অবহেলা—আসলে সমস্যাটা দুই পক্ষেরই! কেউই শিক্ষার্থীদের সুফলের জন্য কোনো সমাধানের পথে হাঁটছে না। ঢাবি নিজের যায়গায় শতভাগ ত্রুটিহীন হলে অবশ্য সাত কলেজের দায়িত্বশীল শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারত। সে অধিকার তাদের নিশ্চয়ই আছে। যেহেতু বোর্ড হিসেবে বলি আর অভিভাবক হিসেবে বলি—সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক।
বিষয় হলো সাত কলেজের সমন্বয়ক কিংবা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কলেজগুলোর সমস্যা–সংকট যথাযথভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছুই হবে। নানা সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের মতামত এবং শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালাও প্রণয়ন করা যেতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা।
সব সংকট মোকাবিলা করে মন্দের ভালো হলো শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনা করে ফলাফল অতি দ্রুত প্রকাশের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সব ফলাফল প্রাপ্তির জন্য যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিতে হয়, নীলক্ষেত কিংবা নিউমার্কেটে মিছিল কিংবা মানববন্ধন করতে হয়, তবে এটা শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন লজ্জার বিষয়, ঠিক তেমনি দায়িত্বশীলদের জন্যও বিব্রতকর।
*লেখক: মো. সায়েদ আফ্রিদী, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ