কিশোর গ্যাংমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রয়োজন

কিশোর গ্যাংপ্রতীকী ছবি

অতীত অভিজ্ঞতা এবং দেশের পত্রপত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছি, এ দেশে যখনই কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই দলের লোকজন তথা নেতা-কর্মীরা শাসন করার উদ্দেশ্যে কিশোর তথা বিপদগ্রস্ত যুবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। বর্তমানে এ দেশে ৬৪টি জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় এদের উপস্থিতি আছে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় জেলা শহর, এমনকি গ্রামগঞ্জে এদের যথেচ্ছ উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এদের বড় একটি অংশ চুরি-ছিনতাই, হত্যাকাণ্ড ও মাদক ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত এবং অনেকে মাদকসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বনে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনে মত্ত। কিছুদিন আগেও ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে যে অবৈধ লুটপাট চালানো হয়েছে, এর বড় একটি অংশ ছিল টোকাই তথা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এ ছাড়া অনেক এলাকায় চুরি-ডাকাতিসহ নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এরা জড়িত বলে দেশে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে । এ ছাড়া বিভিন্নভাবে সামাজিক অনলাইন মাধ্যমগুলোর ভিডিও দেখলে এগুলো স্পষ্ট হয় যে কিশোর গ্যাং আজ সমাজে বিষফোড়া হিসেবে জাগ্রত হয়েছে।

পারিবারিকভাবে শাসনব্যবস্থার অবনতি, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের ফলে আজ আমরা পুরো জাতি এখন কিশোর গ্যাংয়ের দ্বারা ক্ষতির সম্মুখীন! তাই এখন থেকে আমাদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিটি পরিবার থেকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পাড়া–মহল্লায় যাঁরা আমাদের জনপ্রতিনিধি আছেন এবং প্রতিটি মসজিদ-মন্দির ও অন্যান্য ধর্মের যাঁরা প্রতিনিধি আছেন, তাঁদেরকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ভালো ও মন্দের তফাত বোঝাতে হবে। কাউন্সেলিং করতে হবে। সমাজে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের ভুমিকা বাড়াতে হবে। প্রতিটি কিশোর ও যুবাদের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

কোনো শিশু খারাপ হিসেবে জন্ম নেয় না। আমরা যদি প্রয়োজনীয় সুযোগ ও সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারি, তবে হয়তো আগামী দিনে এই সমাজে কিশোর গ্যাং তথা টোকাই থেকে মুক্তি মিলবে। তবে পরিবার থেকে এদের প্রয়োজনীয় শাসনের অভাব, সমাজে অসম বণ্টনসহ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব দূর করা বেশি প্রয়োজন।

লেখক: মো. সাইফুল ইসলাম মিল্টন, বেসরকারি চাকরিজীবী, বগুড়া

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]