পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস: তরুণদের ভবিষ্যৎ কি নিরাপদ

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পিএসসির অধীনে বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের প্রায় ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪–এর এক প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

টিভি চ্যানেলটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবশেষ গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ক্যাডার ও নন–ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আরও উদ্বেগজনক হচ্ছে, এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত পিএসসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

পিএসসির ভূমিকা ও তরুণ প্রজন্মের হতাশা

পিএসসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এমন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শুধু তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের সঙ্গে প্রতারণা নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাহীনতার সৃষ্টি করছে। দেশের লাখো মেধাবী তরুণ-তরুণী তাঁদের জীবনের সেরা সময়টুকু বিসিএসের পেছনে ব্যয় করেন। তাঁদের জন্য এ ধরনের খবর হতাশাজনক ও ভীতিকর। তাঁদের জন্য বিসিএস শুধু একটি পরীক্ষা নয়; বরং এটি একটি স্বপ্ন, যা তাঁরা নিজেদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করতে চান। পিএসসির এ মহামারি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।

রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাহীনতা

পিএসসির মতো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এমন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাকে অন্যতম একটি সংকট বলা যেতে পারে। পিএসসি যে আস্থা ও সম্মান নিয়ে এত দিন কাজ করেছে, তা আজ হুমকির মুখে। দেশের লাখো তরুণ, যাঁরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণের আশায় বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন, তাঁদের জন্য এ ধরনের ঘটনা অতি হতাশাজনক। সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে পিএসসির প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। একটি সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য দেশের মেধাবী তরুণদের জন্য নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দেশের প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী তরুণদের জন্য বিসিএস শুধু একটি হতাশার নাম হয়ে থাকবে।

সমাধানের উপায়

সরকারকে এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, পিএসসির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয়ত, পিএসসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পিএসসি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির ওপর জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে এ সংকট মোকাবিলায় তৎপর হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখতে হলে পিএসসির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের আশা ও স্বপ্ন পূরণের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে কোনো প্রকার অনিয়ম সহ্য করা হবে না। এই লক্ষ্যে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। দেশের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন ও আশা পূরণের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।

*লেখক: হাবিবুর রনি, শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তর (থিসিস সেমিস্টার), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ‌্যালয়, ময়মনসিংহ।