প্রিয় হুমায়ূন

হুমায়ূন আহমেদ

ব্যক্তি হুমায়ূনের সঙ্গে প্রথম দেখা ১৯৯৭ সালে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। আব্বু তখন চাকরির সুবাদে সীতাকুণ্ডে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় হুমায়ূন আহমেদের কুঁড়েঘরের মতো কিছু একটা ছিল, যেখানে হুমায়ূন পূর্ণিমার সময় মাঝেমধ্যেই জোস্না দেখতে যেতেন। বঙ্গোপসাগরটাও খুব কাছ থেকে, ভালোভাবে দেখা যায় চন্দ্রনাথের চূড়া থেকে। এর আগে অবশ্য হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখা হয়েছে, বিশেষ করে ‘কোথাও কেউ নেই’ কিংবা ‘আজ রবিবার’।

ছবি: লেখক

একটা ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠান ছিল সেটা, সঙ্গে হুমায়ূনের একক বইমেলা। পুরো অনুষ্ঠানজুড়েই গম্ভীর মুখে বসেছিলেন হুমায়ূন, মাঝের বিরতিতে মঞ্চের পেছনে অন্ধকার রিহার্সাল রুমে একের পর এক সিগারেট ফুঁকছিলেন। অনুষ্ঠানে যখন কথা বলার সময় এল, মাইক্রোফোনের সামনের হুমায়ূনকে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে গম্ভীর মুখে বসে থাকা হুমায়ূনের সঙ্গে মেলানো অনেক কঠিন ছিল। একজন জড়তাহীন মানুষ, গল্পের মতো অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিল, সম্পূর্ণ শুদ্ধ বাংলায়ও না, কিছুটা ঘরোয়া, মজলিশি ধরনের, কাছের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যেভাবে আমরা কথা বলে অভ্যস্ত।

সেদিন রাতে অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরে আব্বুর মতো সাহিত্যবিমুখ মানুষ ও সাহিত্য অনুরাগী হয়ে উঠেছিল। এরপর ও হুমায়ূনের সঙ্গে ৫-৭ বার দেখা হয়েছে, প্রতি একুশের বইমেলায় অন্যপ্রকাশের স্টলে আসলেই হুমায়ূনের দেখা মিলত। এর মধ্যে হুমায়ূনের সব বই মোটামুটি কেনা ও পড়া শেষ। তাঁর হিমু, রুপা, মিসির আলি কিংবা শুভ্র সব কটি চরিত্রই বাঙালি মধ্যবিত্তের স্বপ্নের চরিত্র, রহস্যময়, খেয়ালি।

হুমায়ূনের লেখার সাহিত্যমান নিয়ে অনেকেরই দ্বিধা। হয়তো একটু বেশিই সহজ, গভীরতা একটু কম। কিন্তু একটা সাহিত্য বিমুখ জাতিকে কিছুটা হলেও সাহিত্য প্রেমিক করার কৃতিত্ব অনেকটাই হুমায়ূন আহমেদের।

হুমায়ূনের বেশির ভাগ লেখাই একবার শুরু করলে শেষ না করে উঠা কঠিন। এটা শুধু তাঁর গল্প কিংবা উপন্যাস নয়, ব্যক্তিগত জীবনের ছোট ছোট গল্পগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ছবি: লেখক

হুমায়ূনের কারণেই একালের তরুণদের অনেকেই এখনো রবীন্দ্রনাথ কিংবা হাসান রাজা কে চিনে, ঝুমবৃষ্টিতে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরতে চায়, জোস্নায় স্নান করে।

হুমায়ূনের সৃষ্টি থেকে ব্যক্তি হুমায়ূন অনেক বেশি রহস্যময়, খেয়ালি। মূলত হুমায়ূনের প্রভাবেই ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে নেওয়ার একটা ইচ্ছা দেখা দিয়েছিল। সে ইচ্ছা যে এখনো মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে না, তা কিন্তু নয়। এ ছাড়া হুমায়ূনের কারণেই নামের আগে একটা সময় একটা ‘ড.’ লাগানোর খায়েশ হয়েছিল।

হুমায়ূন আর আমার জন্মদিন একদিন আগে পরে, আমরা দুজনই বাবা-মায়ের বড় ছেলে, কিংবা আমাদের দুজনেরই শেষ নাম আহমেদ (যদিও এখন মুকুল) এসব নিয়ে সব সময়ই একটা ছেলেমানুষি ভালো লাগা কাজ করে।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুটা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। এখনো একুশে বইমেলা আসলেই, কিংবা অন্যপ্রকাশের আশপাশে গেলেই হুমায়ূনের অভাবটা ভালোভাবে টের পাওয়া যায়, বইমেলাকে অনেকটাই প্রাণহীন, শুষ্ক মনে হয়।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ। শুভেচ্ছা।

শরীফ আহমেদ মুকুল : সহযোগী অধ্যাপক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি