কিশোর গ্যাং কালচার
বাংলাদেশে বর্তমানে অন্যতম বড় সামাজিক সমস্যা হচ্ছে কিশোর গ্যাং কালচার। কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, ধর্ষণ, অপহরণ, খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ করে থাকে। কিশোর গ্যাং দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অনেকটা ব্যর্থ হচ্ছে। কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোকে অনেক সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা পরিচালিত করেন। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারি, মাদক ব্যবসা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাসহ নানা ধরনের অপকর্ম করেন। কিশোর গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস কারও থাকে না। কারণ, প্রতিবাদ করলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা হামলা করবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে রক্ষা করবেন। কিশোর গ্যাংগুলোর দৌরাত্ম্যে নারীরাও রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারেন না। কিশোর গ্যাং সদস্যরা নারীদের নানা ধরনের কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকে। প্রস্তাবে রাজি না হলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা ইভটিজিং করেন।
কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদা না দিতে চাইলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায়। রাতের বেলায় পথচারীরা কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্কে থাকেন। কিশোর গ্যাং সদস্যরা রাতের বেলায় নির্জন রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে থাকে। ছিনতাই করতে কেউ বাধা প্রদান করলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে। এ ছাড়া কিশোর গ্যাং সদস্যরা ডাকাতি ও মাদক ব্যবসা করে থাকে। মাদকের ছোবলে যুবসমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কিশোর গ্যাং সদস্যরা বিত্তবানদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবিসহ সবকিছু লুট করে নেয়।
কিশোর গ্যাং নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কিশোর ও তরুণদের মধ্যে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। সরকারের উচিত, কিশোর সংশোধনাগার ও মাদক পুনর্বাসনকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। কিশোর গ্যাংকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া রাজনৈতিক নেতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কিশোর গ্যাংকে হাতিয়ার বানিয়ে কেউ যেন কোনো ফায়দা নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিশোর গ্যাংগুলোকে কঠোর হস্থে দমন করতে হবে।
কিশোর গ্যাং নির্মূলে রাস্তাঘাটে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। রাতের বেলায় মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়াতে হবে। কিশোর গ্যাং তৈরি এবং এসব গ্রুপকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখার বিধান করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। কারণ, কিশোর গ্যাংয়ের বেশির ভাগ সদস্যই মাদকাসক্ত। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কারণ, কিশোর গ্যাং সদস্যরা বেশির ভাগই পড়ালেখা করে না। কিশোর গ্যাং সদস্যদের পরিবারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পরিবারগুলো এসে জবাবদিহি না করলে কিশোর গ্যাং সদস্যদের সংশোধনাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
লেখক: মো. মাহিন ভূঁইয়া, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ