পৃথিবীর মানবতা আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে

‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। হামাসের গেরিলা যোদ্ধারা গাজা উপত্যকার নিকটবর্তী ইসরায়েলের বসতিস্থলে ঢুকে এই হামলা চালায়। এতে বহু ইসরায়েলি প্রাণ হারায় এবং অনেক ইসরায়েলি নাগরিককে জিম্মি করে হামাস। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্য উত্তেজনার মধ্যে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ হামলা বিশ্ববাসীকে শঙ্কিত করেছে। ইসরায়েলের এই ন্যক্কারজনক হামলায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ প্রতিবাদ জানায়। এই হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন জুগিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। দেড় বছর ধরে চলা এ হামলায় পুরো গাজা অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপ করে ফেলেছে ইসরায়েল।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজায় অমানবিক নৃশংস হামলা চালায় ইসরায়েলের বাহিনী। বৈশ্বিক ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে তারা জোরালো হামলা অব্যাহত রাখে গাজায়। বহু জল্পনাকল্পনার পর এই বছরের জানুয়ারিতে আলোর মুখ দেখে যুদ্ধ বিরতি। যুদ্ধবিরতিতে একটুখানি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পায় গাজাবাসীরা। গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর মেয়াদ শেষ হয় ২ মার্চ। যুদ্ধবিরতির মূল চুক্তিতে বলা ছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলাকালে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হবে। যদি এর মধ্যেও দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে সমঝোতা না হয়, তাহলে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলবে।

কিন্তু চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গত ১৮ মার্চ আবারও গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারগুলোর আহ্বান অমান্য করে আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজাবাসী আবারও ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনের মরদেহ খোঁজার মতো করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির মধ্যে পুনরায় হামলা করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মূলত গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসেবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭৫২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৫ জন। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে অর্ধেক শিশু। জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুরো গাজা অঞ্চলকে আকাশপথ, স্থলপথ, রেলপথসহ চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করার কারণে গাজাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বড় জেলখানা’ বলা হয়। গাজার পার্শ্ববর্তী দেশ মিসরের মোহাম্মদ মুসরীর সরকার থাকাকালীন হামাসকে যথেষ্ট সুযোগ–সুবিধা প্রদান করত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি মিসরের প্রেসিডেন্ট হলে তারা হামাসকে সব সুযোগ–সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়াল তুলে দেয়। যাতে গাজা থেকে কেউ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে যেতে না পারে। এতে গাজাবাসীর ভয়াবহতা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

মুসলিম বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী সংকট হিসেবে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ফলদায়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অতীব জরুরি। এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম হামাস ও ইসরায়েলের দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতিসংঘের মাধ্যমে ইসরায়েলকে গঠনমূলক ও কার্যকর সংলাপে উদ্ধৃত করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের মুক্তি প্রদানে প্রায় ২৯ বছর ধরে চলমান শান্তি আলোচনায় ভঙ্গুরতা কাটিয়ে গতিশীলতা আনতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ ও জনমত, দৃষ্টিভঙ্গির মনোভাব গঠন করতে হবে। সব ধরনের স্বার্থসিদ্ধিকে পরিহার করে মানবতাবোধ জাগরণের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি রক্ষা ও মুসলিমদের অধিকার পূরণে এগিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে আল আকসার পবিত্র ভূমি রক্তে রঞ্জিত হবে না, নিরীহ শিশুর আহাজারিতে বুক ফুলে উঠবে না, গাজাবাসীর কান্নার আওয়াজে কেউ হাহাকার করবে না, সেখানে গড়ে উঠবে শান্তির সুবাতাসের বাতায়ন এবং মানবতাবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

*লেখক: শাহ মুনতাসির হোসেন মিহান, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়