পদ্মা সেতু: যোগাযোগের নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগে নতুন মাত্রা এসেছে। সাধারণত বৃহত্তর যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া অঞ্চলের মানুষ যাতায়াতের জন্য পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এবং খুলনা ও বরিশালের মানুষ মাওয়া ঘাট ব্যবহার করতেন। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে বাড়িতে যাতায়াত করতাম। অন্য সময়ের থেকে ঈদ বা কোনো পালাপার্বণে ফেরিঘাটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতো হতো। একবার ঈদে তো সাত ঘণ্টার বেশি সময় জ্যামে আটকে ছিলাম। শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা হতো। ঘাটে জ্যাম না থাকলে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থেকে ঢাকাতে আসতে সাত ঘণ্টার বেশি সময় লাগত। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ায় পর এখন অনেক পরিবহন পদ্মা সেতু ব্যবহার করে ঢাকাতে প্রবেশ করছে, যেখানে সময় লাগে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা। কয়েক মাস আগে রাতে একবার ঢাকাতে এসেছি চার ঘণ্টার একটু বেশি সময়ে। কয়েক দিন আগে সরকারি কলেজের এক শিক্ষক বললেন, ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গাতে তাঁর গ্রামের বাড়ি যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু সেতু চালু হওয়ার আগে ফেরিঘাটেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন পরিবহন ব্যবসাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এই দিকে বাস কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে, সঙ্গে পরিবহন অফিসগুলোর যাত্রী সেবা তুলনামূলক বেড়েই চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সেতুটি অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে, যা সামগ্রিকভাবে সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে, যেখানে তিন কোটি মানুষ সরাসরি সুফল ভোগ করবেন। এখন পদ্মা সেতুর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা তৈরি করতে হবে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে সহায়তা করবে এটি। ঢাকা থেকে বিভিন্ন অফিস-আদালত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে নিয়ে ঢাকা–মাওয়া মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করা যায়। রেল যোগাযোগ চালু হলে যাতায়াত আরও আরামদায়ক ও কম সময়ে করা যাবে। কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ সব কার্যক্রম পরিকল্পনা মাফিক করতে হবে।
লেখক: মো. শাহিন রেজা। সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।