বর্তমান প্রজন্ম এবং ফার্মা লিডার!

ফার্মেসি হলো ওষুধ প্রস্তুত বিদ্যা বা ম্যানুফ্যাকচারিং অব মেডিসিনকৃতজ্ঞতা: ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি, কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োটেক ইত্যাদি কোর সাবজেক্টে পড়ে সরকারি চাকরি আর উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যাওয়ার পরেই বড় একটি সুযোগ্য খাত রয়েছে, আর সেটা হলো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে চাকরি। ৯৮ শতাংশ ওষুধের জোগানদাতা এই খাত অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে। কিন্তু সদ্য পাস করা একজন শিক্ষার্থীর কাছে কেন প্রথম সারির ক্যারিয়ার গড়ার সিঁড়ি হয়ে উঠছে না, সেটা অবশ্যই ভাবনার বিষয়।

বলাবাহুল্য, ভবিষ্যতের ফার্মা লিডার তৈরি না করলে অপার এই সম্ভাবনার দ্বার দক্ষ আর দায়িত্ববান লিডার ছাড়া অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে যাবে। সরকারি চাকরি না পেয়ে একান্তই বাধ্য হয়ে অনেকেই ঢুকছে, কাজ করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছে, কাজে মনোনিবেশের তুলনায় কোম্পানির সুযোগ-সুবিধা আর নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে ভাবতে দিন চলে যাচ্ছে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালে যার স্বপ্ন মাসে বেতন পাবেন ৪০হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, কিন্তু বাস্তবে অনেকেই পাচ্ছেন এর অর্ধেক। অন্যদিকে হয়তো তাঁর কোনো বন্ধু এর চেয়ে কম যোগ্যতা নিয়েও অনেক বেতন পাচ্ছেন। এই যে তুলনামূলক জীবনধারা, এতেই দক্ষ কর্মী আর লিডার তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু সবার জীবনগতি কি একই হবে? সবাই কি বিসিএস ক্যাডার বা বড় উদ্যোক্তা হতে পারবেন! সব কোম্পানি এই একই ধরনের বেতন দিতে পারবে না কি, সেটা সম্ভব! জীবনযুদ্ধে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া কি একেবারেই অসম্ভব!

আমাদের সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে অনেকেই এর থেকে বের হতে পারছেন না। তুলনামূলক জীবনধারায় হতাশা ছাড়া আর কিছু আসবে না; বরং বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে সম্মুখে নিয়ে যাওয়াই কাম্য। ভবিষ্যৎ লিডার তৈরি করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মেধা সঠিকভাবে কাজে না লাগালে খুব বেশি দিন নেই, যখন দেশের বাইরে থেকে মানুষ আনতে হবে ওষুধের ফরমুলেশন, উৎপাদন, গুণগত মান নির্ণয় আর নিশ্চিত করতে। তিল তিল করে গড়ে তোলা দেশের ওষুধশিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের প্রথিতযশা ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ইঞ্জিনিয়ারসহ অনেক টেকনিক্যাল মানুষ। সঠিকভাবে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ভারসাম্য রক্ষার্থে ভবিষ্যৎ ফার্মা লিডার তৈরি করা এখন সময়ের ব্যাপার।

কাজ করতে গিয়ে যদি সারা দিন এই ভেবে দিন যায় যে কোথায় এলাম, কী হবে আমার ভবিষ্যৎ, আর কেনইবা বা এলাম, পরবর্তী সময়ে কোন সেক্টরে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি; তাহলে কিন্তু কোথাও না কোথাও ভুল হতেই থাকবে। রাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরিরত প্রতিষ্ঠান, কর্মী আর সিনিয়র সবাইকেই এই দায়িত্ব নিয়ে ভবিষ্যৎ লিডার আর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতেই হবে। কারণ, হতাশাগ্রস্ত কর্মী দিয়ে সুদূরপ্রসারী আশাব্যঞ্জক কিছু সম্ভব নয়।

বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে ফার্মা খাতে চাকরির জন্য অবশ্যই গর্বের আর মানবসেবার অন্যতম পরোক্ষ মাধ্যম। এই গর্বিত খাতের এ সিনিয়রদের মতোই নিজের পুরোটা ঢেলে না দিতে পারলে অনেকটাই অপূর্ণ, অনিরাপদ আর ভারসাম্যহীন হয়ে যেতে পারে।

*লেখক: মনোজিৎ কুমার রায়, ফার্মা প্রফেশনাল