কৃষক বাবাকে নিয়ে কিছু কথা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর
বাবা তুমি কি জানো? বাইরে এখন ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, আর তুমি জানতে পারবেই–বা কোথা থেকে। তুমি হয়তো মাঠে কাজ করছ। বাবা, তুমি কি দুপুরের খাবার খেয়েছ? খাওয়ার সময়টা মনে হয় আজকে এখনো হয়ে ওঠেনি। বাবা, আজ এত প্রচণ্ড রোদ থেকে একটু ক্লান্তি মেটানোর জন্য তুমি কি ফ্যানের বাতাস দিয়ে তোমার গা জুড়িয়েছ? গা জোড়াবেইবা কোথায় থেকে, গ্রামে যে পরিমাণ লোডশেডিং হয়। এসব তো বাদই দিলাম, আমাদের কথা মনে হলে এসব কিছুই মনে হয় না, তাই না বাবা।
বাবা, এই গরমের মধ্যে তোমার কি একটুও ফ্রিজের কোমল পানীয়, যেমন সেভেনআপ বা স্যালাইন খেতে ইচ্ছা করেনি? করবেই–বা কোথা থেকে। তুমি যে বিলাসিতা পছন্দ করো না। বাবা, তুমি কি জানো, আজ তোমার জন্য কতটা কান্না করেছি? আর তুমি জানবেইবা কোথা থেকে, আমি যে তোমার কাছ থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে। বাবা, আজকের আগে যত দিন কান্না করছি, হয়তো মা, না হয় তুমি সান্ত্বনা দিয়েছ। আজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসার সময় এ রোদের প্রখরতায় অনুভব করে আমার মনে হলো, তুমি এ রোদের মধ্যে মাঠে কাজ করছ। তাই তোমার কথা অনেক মনে পড়ছে। কক্ষে এসে অনেক কান্না করেছি। কেউই ছিল না সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। নিজেকে শূন্যতার মধ্যে আবিষ্কার করলাম। তখন নিজেকে তোমার সেই কথাগুলো, যা তুমি সব সময় বলতে, ‘বাবা, অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করাইতেছি।
মানুষের মতো মানুষ হও।’ এই কথাগুলো দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম।
বাবা, তুমি যা উপার্জন করছ, সবটুকুই আমাদের জন্য ত্যাগ করছ, নিজের জন্য কি একটুও ভালো কিছু করার ইচ্ছে জাগে নেই। বাবা, বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, তোমার বাবা কী করে, তখন আমি গর্বের সঙ্গে বলি, আমার বাবা একজন কৃষক। বাবা, সত্যিই তুমি আমার জন্য অনুপ্রেরণা। বাবা, তুমি কত কষ্ট করে আমাদের পড়াশোনা খরচ বহন করতেছ। বাবা, তুমি জানো না, তোমার ছেলে এখানে কী করছে। তবু তুমি ১৮০ কিলোমিটার দূরে বসে থেকে আমার জন্য টাকা পাঠাচ্ছ। এটা কোনো সময় সম্ভব, যখন একটা ছেলের প্রতি বাবা আত্মবিশ্বাস থাকে। বাবা, আমি কথা দিচ্ছি, তোমার আত্মবিশ্বাস আমি নষ্ট করব না। বাবা, তুমি দোয়া কোরো, তোমার ছেলে একদিন ভালো কিছু করবে।
বাবা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বাবা, তোমাকে আজ আমার এ মুহূর্তে জড়িয়ে ধরতে অনেক ইচ্ছা করছে। কিন্তু সম্ভব না, কারণ তুমি যে আমার কাছে থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তোমাকে সুস্থ রাখেন, মাকেও আমার সালাম দিয়ো। ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা দিকটাও খেয়াল রেখো।
লেখক: মামুনুর রশিদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, গণিত বিভাগ, ১৬তম আবর্তন