আমার প্রথম লেখালেখির গল্প

লেখালেখিফাইল ছবি

কেজিতে (প্রাইমারি) পড়তাম। তখন আমাদের ঘর ছিল মাটির দেয়াল আর বাঁশের বেড়া দিয়ে। ঘরের বাঁশের বেড়ায় সৌন্দর্য রক্ষার্থে পেপার (পত্রিকা) লাগানো হতো প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতে। তখন আমি বেড়ায় লাগানো পত্রিকায় শিরোনাম দেখে পড়তাম পুরো গল্প। পড়তাম পত্রিকায় ছাপানো ক্লাস ফোর-ফাইভের শিক্ষার্থীদের লেখা ছড়া-কবিতা। আবেগ-আপ্লুত হতাম। মনে মনে ঈর্ষাও জাগতো। ভাবতাম, যদি আমিও লিখতে পারতাম পত্রিকায়! আমারও একটি লেখা কবিতা নামসহ প্রকাশিত প্রকাশিত হতো পত্রিকায়। তবে কী যে ভালো লাগতো!

এরপর প্রাইমারি শেষ করি। মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন আমার মা। তখন আর পত্রিকার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি কয়েক বছর মাদ্রাসার পড়াশোনার চাপের কারণে। এমনিতেই মাদ্রাসামুখী শিক্ষকেরা পত্র-পত্রিকাকে তেমন একটা ভালো চোখে দেখতেন না। মাদ্রাসার নিয়ম-কানুন মেনে চলা আর পড়াশোনার চাপে এক্কেবারে বিমুখ হয়ে গিয়েছিলাম আমার প্রিয় শখ পত্রিকা পড়া থেকে। তবে একবার আরেক মাদ্রাসায় পড়ার সময় প্রতি মাসের একটা ম্যাগাজিন হাতে পেতাম ঐ এলাকার কিছু ভাইদের কাছ থেকে। ম্যাগাজিনটা কবিতা-ছড়া, রম্যগল্প-উপন্যাস, ফিচার ও ভ্রমণকাহিনিতে পরিপূর্ণ ছিল। পড়তাম ভালো লাগতো। এরপর থেকে আবার আমার পত্র-পত্রিকার প্রতি ঝোক বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে করোনার মতো মহামারি ভাইরাস। তখন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় আর আমার মাদ্রাসায় পড়াশোনারও সমাপ্তি ঘটে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিলে আমি চলে আসি আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তখন থেকে প্রতিদিন পত্রিকা পড়তাম। শত শত পত্রিকার মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার পত্রিকা প্রথম আলো। প্রতিদিন নিয়ম করে প্রথম আলো সংগ্রহ করতাম। বিশেষ করে শুক্রবারের সাহিত্য পাতা আমার কাছে অত্যন্ত পাঠপ্রিয় ছিল এবং এখনো আছে। এরপর করোনার মাঝামাঝি সময়ে আমি আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে চলে আসি সমস্ত পুরোনো পত্রিকা নিয়ে। তখন কিন্তু করোনার প্রভাব কাটেনি। বাড়িতে গিয়েও পত্রিকা পড়তাম। আবার আমাদের গ্রামের বাজারে পত্রিকার স্টল না থাকায় পত্রিকা নিয়ে আসত প্রতিদিন হকার ভাইয়েরা। ফার্মেসি ও অন্যান্য দোকানে পত্রিকা দিয়ে যেত হকাররা। লোকেরা ভিড় ধরত পত্রিকা পড়ার জন্য। প্রথম আলো সর্বমহলের লোকেদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের পত্রিকা ছিল। আমিও হকার ভাইয়ের কাছ থেকে প্রতিদিন পত্রিকা সংগ্রহ করতাম এবং পড়তাম। পড়ার ফাঁকে একদিন আম্মা বললেন—সব সময় কী পড়লেই হবে! কিছু লিখতেও জানতে হবে। আমার আগে থেকে লেখালেখি করার ভীষণ আগ্রহ ছিল। হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম—আজ একটি কবিতা অবশ্যই লিখব এবং লিখেও ফেললাম। সেই কবিতাটি বিভিন্ন পত্রিকা-ম্যাগাজিনে পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু প্রকাশিত হয়নি। তবুও আমি লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকলাম। সঙ্গে পড়াশোনা তো আছেই। আরেক দিন আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ড, যিনি আমার প্রিয় লেখক। উনি দারুণ লিখেন। কবি ও অনুবাদক হিসেবেও তিনি অনন্য। উনার কাছ থেকে আর কিছু জনপ্রিয় পত্রিকার ই-মেইল নিলাম। তারপর ই-মেইলের মাধ্যমে কবিতা পাঠাতে থাকলাম বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এরপর হঠাৎ একদিন আমাকে ফিরতি ই-মেইল দিল দৈনিক ইত্তেফাক থেকে। আমার কবিতা প্রকাশের জন্য মনোনীত হয়েছে শুক্রবারের সাহিত্য পাতায়। কবিতাটির নাম ‘মাঝে মাঝে এমনো তো হয়’। এরপর যে কী খুশি! আম্মাকে বললাম, পুরো ঘর আনন্দে মাতিয়ে তুললাম। আমার কবিতা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে পত্রিকায়। আম্মা বেশ খুশি হলেন এবং কবিতাটি আম্মাকে পড়তে দিলাম। তিনি প্রশংসা করে বললেন—‘আমার পুত্র অনেক ভালো লিখতে জানে।’ এরপর থেকে আরও লেখালেখি চালিয়ে গেলাম।

প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক হওয়ার সুবাদে বন্ধুসভার সঙ্গে পরিচিতি হলাম। ওখানে প্রতিনিয়ত লেখা পাঠাই। খুব যত্নে সম্পাদনা করে সম্পাদক মহোদয় প্রকাশ করেন। এটা আমার জীবনে অনেক বড় প্রাপ্তির বিষয়। আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। আমি আরও লিখতে চাই!

লেখক: আব্দুল্লাহ নাজিম আল-মামুন, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]