বেকারত্ব ঘোচাতে করণীয় কী

বেকারত্ব বলতে কী বোঝায়। ধারণা করা হয় যে অবস্থান, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কাজ করতে না পারার বিষয়টিকে বেকারত্ব বলে। আপনি যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে সেটাকে বেকারত্ব বলতে পারেন। বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধী বা সংকট। দেশের বিদ্যমান কাঠামোতে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তি কাজ না পেলে তাঁকে বলা হয় বেকার। একজন বেকার মানুষ যেন গোটা সমাজের দ্বারা অভিশপ্ত। বেকারদের নিয়ে বললে প্রথমেই আসে সমাজ ও পারিবারিক জীবনে তাঁদের অবস্থান।

বেকার থাকা ছেলেটাকে মনে করা হয়, সমাজ বা পরিবারের অভিশাপ। এসব বেকারদের দিনের শুরুটাই হয় অন্যের এবং পরিবারের সদস্যদের ধিক্কার দ্বারা। সমাজের কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত তাঁদের ধিক্কার দিতে থাকেন। দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে একজন বেকারের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়। তখন কেউ কেউ হতাশা ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে নিয়ে ফেলে ভুল পদক্ষেপ। অনেকে নিজেকে অসামাজিক ও খারাপ কাজে জরিয়ে ফেলেন। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে পরিবার ও দেশের ওপর। যে যুব সমাজ দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখার কথা, সে যুব সমাজ কর্মের অভাবে দিন কাটায় বহু কষ্টে। অসচ্ছল পরিবার থেকে একজন বেকারকে পেতে হয় লজ্জা ও হীনতা। তার কারণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। কেননা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বহুশিক্ষিত বেকার কিছু শুরু করতে পারেন না। অথচ ইউরোপ–আমেরিকায় রাস্তায় ফল বা সবজি বিক্রি করতেও গ্র্যাজুয়েটরা একটু লজ্জাবোধ করেন না। কারণ, তাঁদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিটা অন্যরকম। কিন্তু কেন এত বেকারত্ব হয়, তা দেখার বা ভাবার যেন কেউ নেই।

বেকারত্ব বর্তমান সময়ে দেশের একটি বড় ও জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শিল্পায়নের অভাব, পর্যাপ্ত কর্মসংস্হানের অভাব, সমন্বয়হীন শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমাজ ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির উন্নয়নের অভাব, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার অভাবের কারণেই দিনকে দিন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বেকারত্বের দিক দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম সারির দিকে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটির মতো। এত বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া, শিল্পকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত করা। তাছাড়া উৎপাদনমূখী শিক্ষাব্যবস্থাও বেকারত্ব ঘোচাতে ফলপ্রসূ ভুমিকা রাখতে পারে।

বেকারত্ব নিয়ে মনীষীদের বিশ্লেষণে পাওয়া যায়, ‘বেকারত্বের সবচেয়ে খারাপ দিক ক্ষুধা নয় বরং সবচেয়ে বড় খারাপ হল অলসতা।’ সাফল্য তোমার কাছে আসবে না। তোমাকে অর্জন করতে হবে। আর এটা না বুঝলেই তোমাকে বেকারত্বের শিকার হতে হবে। পরিশেষে বলা যায়, তরুণ প্রজন্মের চাকরি নামক সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে আত্ন-কর্মসংস্থানমূলক কাজের কথা ভাবা। বেকারত্ব ঘোচাতে সরকারকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে বেকারত্ব অনেকটাই লাঘব হতে পারে।

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]