জন্মদিনের শুভেচ্ছা প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

১২ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। আমি ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমবার জাহাঙ্গীরনগরে আসি। শীতের বিকেলে বাস থেকে ডেইরি গেটে নামি। এরপর সেন্ট্রাল ফিল্ডের মাঝ দিয়ে এম এইচ হলে যাওয়ার পথে একধরনের সুখ অনুভব করছিলাম। রাতে তীব্র শীত, শিয়ালের ডাক, সকালে শিশিরভেজা ঘাস, অতিথি পাখি আর বিশাল বড় ক্যাম্পাস দেখে মনে মনে ভাবতে থাকি, এখানে সুযোগ পেলে শিক্ষাজীবন সুন্দর কাটবে। ভর্তি পরীক্ষার কয়েক দিন স্বপ্নের মতো কেটেছিল আমার। অল্প সময়ে বেশ আপন হয়ে যায় প্রায় ৭০০ একরের এই স্বর্গীয় ভূমি। আমি এখানে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলাম।

প্রতিবছর ১২ জানুয়ারি জাঁকজমকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বতন্ত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চায় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে। ধারণা করা যায়,  সরকারের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, যা পাঠদান ও গবেষণার কাজ ত্বরান্বিত করবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ–বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ প্রশাসন, গবেষণা ফার্ম, আন্তর্জাতিক সংস্থা, মিডিয়াসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নির্মিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার, আছে  ‘সংশপ্তক’ ও ‘অমর একুশে’ ভাস্কর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিচর্চায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন। এখানকার দৃষ্টিনন্দন ‘মুক্তমঞ্চ’-এ সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান লেগে থাকে। নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে ছড়িয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা বিভাগের ছাত্র সৌমিত্র শেখর ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ভূগোল বিভাগের ছাত্রী হাফিজা খাতুন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, নৃবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান, অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি, শহীদুজ্জামান সেলিম, জাকিয়া বারী মম, বিন্দু, সুমাইয়া শিমু; জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও শারমিন আক্তার সুপ্তা; ফিফা রেফারি জয়া চাকমাসহ বহু দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন গবেষণাকাজ বৃদ্ধি করতে এখানে প্রযুক্তি, মেডিকেল ও কৃষি অনুষদ চালু করা সময়ের দাবি। প্রযুক্তির বিকাশে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এখন সময়োপযোগী কারিকুলাম নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে কয়েকটি সেক্টরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, কৃষি তার মধ্যে অন্যতম। আধুনিক চাষাবাদ ও নতুন নতুন ফসল উদ্ভাবনে কৃষি অনুষদ কাজ করতে পারবে।

সাভার-আশুলিয়াতে দেশের বেশির ভাগ পোশাকশিল্পের কারখানা অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়টিও সাভারে অবস্থিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পোশাকশিল্প–সম্পর্কিত ইনস্টিটিউট চালু করতে পারে। এ ছাড়া আবহাওয়া ও জলবায়ু সেন্টার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট চালুসহ বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করে নতুন নতুন জ্ঞান উদ্ভাবনে সহায়তা করতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এখানে সামাজিক বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ওশান সায়েন্স ও ব্লু ইকোনমি, নৃত্যকলা ও সংগীত, উন্নয়ন অধ্যায়ন, টেলিভিশন, ফটোগ্রাফিসহ আরও নতুন বিষয় চালু করা যায়। অতিদ্রুত বিবিএ ও আইন অনুষদ এবং আইবিএ ইনস্টিটিউটের বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুর মূলে থাকবে শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়ন। সঠিক ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা নিতে পারলে আমাদের বিশ্বাস, সেদিন আর বেশি দূরে নেই, যেদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি।

  • লেখক: মো. শাহিন রেজা, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়