দুস্থদের মাঝে ঈদের খুশি বিতরণ একঝাঁক তরুণের

সমাজের অসহায় বিত্তহীনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণদেরছবি: লেখকের পাঠানো

শাওয়াল মাসের বাঁকা চাঁদ আকাশে ওঠার পরই খুশির বার্তা নিয়ে আসে ঈদ। খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় জানাতে থাকেন একে অপরকে। তাকওয়ার মতো মহামূল্যবান নিয়ামতটি প্রদানের কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য আল্লাহ এই উৎসবের ব্যবস্থা রেখেছেন। মূলত দিনটি আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আনন্দস্বরূপ।

তবে আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের দৈন্যাবস্থা আমাদের হৃদয়কে ব্যথিত করে। যেখানে সমাজর প্রায় সবাই এই দিনে হাসি-আনন্দে দিন কাটায়, তবু অনেকের মুখে লেগে থাকে বিমর্ষতার ছাপ। দিনটিতে প্রত্যেকেই একটু ভালো ও উন্নতমানের খাবার খাওয়া ও নতুন পোশাক পরিধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিদিন অর্ধাহারে-অনাহারেই দিন কাটে যাঁদের, তাঁদের কাছে ভালো খাবার ও ভালো পোশাকের প্রত্যাশা যেন আশায় গুড়ে বালি।

মূলত আমাদের সমাজে নানা শ্রেণির মানুষের বসবাস। কেউ অর্থনৈতিকভাবে অনেক বিত্তবান, কেউ মধ্যবিত্ত, কেউ নিম্নবিত্ত ও কেউ দিনমজুর। আবার কেউ একেবারেই বিত্তহীন। তাঁদের দিন কাটে অর্ধাহারে-অনাহারে। সমাজের এমন বিত্তহীন মানুষেরাও যেন ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য অসামান্য এক উদ্যোগ নিতে দেখা যায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ী গ্রামের একঝাঁক মেধাবী তরুণকে।

সমাজ থেকে খুঁজে বের করে প্রায় এক শ বিত্তহীন মানুষের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণ করেন তাঁরা। ঈদের এই উপহার পেয়ে সমাজের সেই সব বিত্তহীনের মুখে ফুটে ওঠে প্রাপ্তির হাসি। বিমর্ষ মুখখানিতে যেন হঠাৎ ঝিলিক দিয়ে ওঠে শাওয়ালের সেই বাঁকা চাঁদ। সামান্য আয়োজনেই সমাজের এই সব বিত্তহীন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে মেধাবী তরুণদের বুক। প্রত্যেকের হৃদয়ে একই সুরে ধ্বনিত হয়ে ওঠে, ‘হ্যাঁ, এটাই তো ঈদের প্রকৃত আনন্দ।’

সমাজের দুস্থ অসহায়দের সাহার্য্যার্থে মেধাবী সেই তরুণেরা গড়ে তোলেন ‘কুঁড়েঘর’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তাঁদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঈদের ছুটিতে বাসায় এসে সমাজের অবহেলিত বিত্তহীন মানুষদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই তাঁদের এই উদ্যোগ। ভবিষ্যতে তাঁদের এই কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করার স্বপ্ন দেখেন প্রত্যেকেই।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পলাশ বলেন, কোভিড-১৯–পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে খুবই স্বল্প পরিসরে আমাদের গুটি কয়েক তরুণের উদ্যোগে প্রথমবার কিছু পরিবারের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে ‘কুঁড়েঘর’ নামে প্ল্যাটফর্মটির যাত্রা শুরু হয়। এরপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ ‘কুঁড়েঘর’ এই পর্যায়ে এসেছে। প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত যাঁরা পাশে ছিলেন এবং আছেন, তাঁদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমাদের প্রচেষ্টা আজীবন অব্যাহত থাকুক, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই প্রচেষ্টাকে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যাক, এই কামনা সব সময়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, ‘আমাদের সমাজে অনেক বিত্তহীন মানুষ আছেন, যাঁরা দুই বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খান। সমাজেও তাঁদের অবস্থান অনেক তলানিতে। তাঁদের চাহিদাও স্বাভাবিকভাবে অনেক কম থাকে। অল্পতেই তাঁদের মুখে ফুটে উঠে স্বর্গীয় হাসি। তাই সমাজের এই সব বঞ্চিত অসহায়–দুস্থ মানুষ যেন ঈদের আনন্দ অন্য সবার মতো সমানভাবে উপভোগ করতে পারেন, তাই আমরা কুঁড়েঘরের ব্যানারে এই সামান্য আয়োজনটুকু করেছি। ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় আকারে এই সামাজিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে চাই। এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’

*লেখক: মোর্শেদ মামুন, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

‘নাগরিক সংবাদ’-এ নানা সমস্যা, জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]