স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধুত্ব

ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

‘আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কবিগুরুর এই উক্তিটি সবারই জানার কথা। আসলেই কি আমরা বন্ধুত্ব থেকে কিছু পাই?

বাস্তবতা আমার কাছে ভিন্ন মনে হয়। কেননা, স্কুল বা কলেজজীবন থেকে আমার ধারণা কবিগুরুর মতোই ছিল, কিন্তু বন্ধুত্বের এ সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য ভিন্নতা পায় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে।

আপনারা হয়তো ভাবছেন বন্ধুত্বে আবার ভিন্নতা হয় না কি?

আমি বলব, হ্যাঁ হয়, যদি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়তাম, তাহলে হয়তো আমিও বুঝতাম না এই ভিন্নতাটা। এখন আসেন ভিন্নতাগুলো তুলে ধরি—

স্কুলে পড়ার সময়ে আমরা যে বন্ধুদের কাছে ভালোবাসা পাই অর্থাৎ বন্ধুত্বের যে বন্ধন থাকে, সেটা অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা হয় না। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে আপনার সুখ, দুঃখ অবাধে শেয়ার করা যায়। সেখানে এই ভয়টা থাকে না যে কী ভাববে আমার সেই সুখ–দুঃখের কথা শুনে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের আপনি আপনার মনের একই অনুভূতিগুলো শেয়ার করলে আপনাকে নানাভাবে অপমানের শিকার বা আপনার সেই অনুভূতিগুলোকে নাটক বলে উড়িয়ে দিতে এক মিনিটও সময় নেবে না।

আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন একটা চপ, ঝালমুড়ি কয়েকজন কাড়াকাড়ি করে খেতাম, সেখানে কেউ কাউকে বলত না ছ্যাচড়া কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বন্ধুর সঙ্গে সেটা করতে যাবেন আপনাকে ছ্যাচড়া, ছোটলোক, আরও কত কথা শুনতে হবে।

স্কুলের বন্ধুরা কখনো আপনাকে ছোট করবে না, কথায় বা কাজে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন্ড যে আপনাকে যেভাবেই হোক ছোট করতে হবে, আপনি যদি ভালো কিছু করেন, সেটার সমালোচনা হবেই, আপনাকে নিয়ে পাঞ্চ মারবেই—এটাতেই নাকি তাদের স্বকীয়তা প্রকাশ পায়।

ছবি: সংগৃহীত

কে কাকে কত ছোট করতে পারে, কে কার পিছনে লাগতে পারে, কে কাকে গোয়েন্দাগিরির মাধ্যমে দাবাতে পারে—এটাই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্ব। তবে হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান হয় না তেমনি সব বন্ধু ও সেরকম হয় না। হাতে গোনা কয়েকজন থাকবে যে আপনার সত্যিকারের বন্ধু হয়ে উঠবে। তবে স্বার্থে আঘাত লাগলে সেটারও কোনো গ্যারান্টি থাকে না।

কিন্তু স্কুলের বন্ধুরা আপনাকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসবে, আপনার সঙ্গে মনমালিন্য হলে পরের দিন আবার আগের মতো হয়ে যাবে সম্পর্কটা, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা হবে না। আপনি তখন হয়ে যাবেন তার চিরশত্রু।

তথাকথিত সেই সব ওয়েল ম্যানারড বন্ধুরা আপনাকে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে বাধ্য করবে। আসলেই কী বন্ধুত্ব এমন হওয়া উচিত? এত এক পবিত্র সম্পর্ক, এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেই কলুষিত হতে দেখেছি একমাত্র।

লেখক: রাফিউল ইসলাম রাফি, ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়