বর্ষায় ১০০ ফিট সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে

গর্ত থাকায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে রাজধানী ঢাকার ভাটারা থানার পাশ দিয়ে যাওয়া ১০০ ফিট সড়কে। ছবিটি সম্প্রতি তোলাছবি: লেখকের পাঠানো

রাজধানী ঢাকার ভাটারা থানার পাশ দিয়ে যাওয়া ১০০ ফিট সড়ক বর্ষার বৃষ্টিতে পরিণত হয়েছে এক জলমগ্ন দুর্ভোগে। রাজধানীর একটি ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থেকে বর্ষায় এলাকায় মানুষ নানা কষ্টে এ পথে যাতায়াত করেন।

প্রতিদিন রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল এমনকি হেঁটে চলাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। পানি জমে থাকা গর্তে পড়ে রিকশা উল্টে আহত হচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। বৃষ্টি হলেই রাস্তার ওপর স্তূপ করে রাখা মাটি, ড্রেনের ময়লা আর ধুলা–ময়লা মিলেমিশে তৈরি হয় কাদার স্তর। খানাখন্দে জমে থাকা কাদাযুক্ত পানির কারণে রিকশা, মোটরসাইকেল এমনকি বড় গাড়িও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপদে পড়ছে মাঝেমধ্যে।

এ সড়কে নিয়মিত রিকশা চালান মো. নজরুল। তিনি বলেন, ‘থানার রাস্তা দিয়া তো যাওনই যায় না। পুরাডা রাস্তায় জায়গায় জায়গায় গত্ত। কাইলকা যাইতে গিয়া যাত্রীসহ রিকশা উল্টাইয়া পড়ছি।’

ভাটারা থানার পাশ থেকে শুরু করে দশতলা পর্যন্ত খেয়াল করলে দেখা যায় এ সড়কের দুই পাশে খাবারের দোকান, মোবাইল সার্ভিসিং, পোশাকের দোকানসহ প্রায় দুশ দোকান রয়েছে। দোকানদার শামীম বলেন, ‘একদিকে দোকানের সামনে খোলা ড্রেন, এখন টানা বৃষ্টিতে প্রায়ই ড্রেন পানির নিচে ডুবে যায়। পানিতে দুনিয়ার ময়লা ভাসে, এমনভাবে কি দোকান খোলা রাখা যায়?’

নাগরিক সংবাদ-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

বেশি বৃষ্টি হলেই এখানে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। সাধারণ পথচারীরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মো. সাদ্দাম হোসেন নামের এক চাকরিজীবী বলেন, ‘এই রাস্তা ছাড়া অফিস যাওয়ার আর কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন পানি আর গর্ত পেরিয়ে যাই। ধুলার দিনে হাঁপানি উঠত, এখন  প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি কখন আবার পিছলা খেয়ে পড়ি। অবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জমা ময়লা পানিতে ভিজে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।’

যানজট এখানে অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খানাখন্দে আটকে পড়া রিকশা, ধীরগতির গাড়ি আর একমুখী চলাচলের ফলে পুরো সড়কে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। অফিস সময়ে এই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেট কারসহ সব পরিবহনকে।

অতিবৃষ্টিতে রিকশায়ও চলাচল করা কঠিন হয় এ সড়কে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা
ছবি: লেখকের পাঠানো

জয়া সরকার নামে এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘রাস্তার বড় অংশটিই মাটির রাস্তা। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা এত পিচ্ছিল হয় যে হেঁটে যাওয়া যায় না, রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে রিকশাও যেতে চায় না, আর গেলেও মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যেন যুদ্ধ!’

এটি কোনো পাড়া-মহল্লার গলি নয় বরং রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকার পাশে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ সড়কের পাশেই রয়েছে সৌদি দূতাবাসসহ একাধিক আন্তর্জাতিক মিশন ও বহুতল আবাসিক ভবন।

স্থানীয় লোকজন জানান, এক বছর আগে ওয়াসা পাইপ বসানোর জন্য রাস্তা খনন করেছিল। এরপর রাস্তা সংস্কারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েকবার আন্দোলন হলেও কাজ হয়নি।

জমে আছে মাটির স্তূপ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা
ছবি: লেখকের পাঠানো

ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর রাস্তা এমনই পড়ে আছে। বর্ষায় পানিভর্তি খানাখন্দ, শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালি। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে ব্যবসা করব?

অবিলম্বে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হলে এ সড়ক জনজীবনের জন্য আরও বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

লেখক: শতরূপা দে, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত।